ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বিপ্লবে টাটা! ২৭,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ, ১০ কো ম্পা নির সঙ্গে চুক্তি!!

ভারত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, তাই সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে উঠেছে। বিশ্বের সমস্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য প্রয়োজনীয় এই সেমিকন্ডাক্টর চিপগুলির উৎপাদন বাড়াতে ভারত সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।
এই প্রসঙ্গে, টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তারা ভারতের সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে ১০টি সেমিকন্ডাক্টর কো ম্পা নির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষর করবে। শুধু তাই নয়, টাটা গ্রুপ ইতিমধ্যেই ভারতে সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তারা ২৭,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি বিশাল সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদন কারখানা স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে। এটি ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক ডিভাইসের চাহিদা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর চিপগুলি কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, গাড়ি, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও শিল্প-কারখানার যন্ত্রপাতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এই চিপগুলির প্রধান উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, ভারতকে নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য এই চিপগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, যা অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতকে একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার “ভারত সেমিকন্ডাক্টর মিশন” নামক একটি কর্মসূচি চালু করেছে, যার মূল লক্ষ্য দেশীয় সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদনকে উৎসাহিত করা। এই মিশনের অংশ হিসেবে টাটা গ্রুপ ভারতীয় সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
টাটা গ্রুপ ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কো ম্পা নির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা করছে, যা উৎপাদন প্রযুক্তি, গবেষণা, উৎপাদন চাহিদা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করবে। টাটা ইলেকট্রনিক্স আসামে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এবং ২৭,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করবে, যা প্রতিদিন ৪.৮ কোটি (৪৮ মিলিয়ন) সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদন করবে। এটি ভারতের বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কারখানা হয়ে উঠবে।
এই প্রকল্প থেকে ৩০,০০০-এরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ভারত সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করবে। এর ফলে বিদেশি মুদ্রার ব্যয় হ্রাস পাবে এবং ভারতের প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে।
এই ঘোষণা আসামে অনুষ্ঠিত “অ্যাডভান্টেজ আসাম ২.০” সম্মেলনের সময় করা হয়। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা, শিল্পপতিরা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভুটান ও জাপানের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
এটি স্পষ্ট যে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির বিকাশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে। ভারতে সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বহুবিধ সুবিধা পাওয়া যাবে।
যদি ভারত এই উৎপাদন ব্যবস্থাকে সফলভাবে বাস্তবায়িত করতে পারে, তাহলে দেশীয় কো ম্পা নিগুলোর জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি হবে। নতুন কারখানাগুলোর কারণে হাজার হাজার নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। উচ্চমানের গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) কেন্দ্র গড়ে উঠবে।
বর্তমানে, ভারত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশ থেকে নন-কোর চিপ আমদানি করে। কিন্তু যদি এই চিপগুলির উৎপাদন দেশেই করা যায়, তাহলে এই ব্যয় কমে যাবে এবং ভারত বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এই উদ্যোগ ভারতীয় যুবসমাজের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মুক্ত করবে এবং দেশের সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এই ঘোষণার ফলে আশা করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে ভারত একটি প্রযুক্তিগত সুপারপাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।