মোহাম্মদ শামির রোজা না রাখার বিতর্কে ইনজামাম-উল-হক বললেন, দিলেন এই পরামর্শ

মোহাম্মদ শামির রোজা না রাখার বিতর্কে ইনজামাম-উল-হক বললেন, দিলেন এই পরামর্শ

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক
ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর শিরোপা জিতে নিয়েছে, কিন্তু এই সময়ে বেশ কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে, যা নিয়ে ভালোই বিতর্ক হয়েছে।

মোহাম্মদ শামিকে দুবাইতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ চলাকালীন জল বা জুস পান করতে দেখা যায়, এবং এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তবে শামির সমর্থনে অনেক নামী-দামি ব্যক্তিত্বও এগিয়ে আসেন।

আসলে, এই সময়টায় রমজান মাস চলছে, যা ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে বলতে শুরু করেন যে রমজান মাসে কোনো মুসলিমের রোজা না রাখা অপরাধের সামিল। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জমাতের সভাপতি মৌলানা শাহাবুদ্দিন রিজভী বरेलভী বলেছিলেন যে রমজানের সময় এমন কাজ করা অপরাধ।

শামির সমর্থনে খ্যাতনামা গীতিকার ও লেখক জাভেদ আখতার এগিয়ে এসে বলেন, “শামি সাহেব, আপনি ওই কঠোর মূর্খদের কথায় কান দেবেন না, যারা ম্যাচ চলাকালীন মাঠে আপনার জল পানে আপত্তি জানাচ্ছে। এটি তাদের কোনো ব্যাপার নয়। আপনি আমাদের গর্বিত করা মহান ভারতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আপনাকে ও পুরো দলকে আমার শুভকামনা।”

কিন্তু এই বিতর্ক শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এটি সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানেও ছড়িয়ে পড়ে।

ইনজামাম শামিকে দিলেন পরামর্শ

পাকিস্তানের সিটি-৪২ চ্যানেলের এক উপস্থাপিকা যখন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হকের কাছে মোহাম্মদ শামির রোজা না রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তখন তিনি বলেন, “খেলার সময় রোজা না রাখা কোনো বড় বিষয় নয়। আমি মনে করি, মূল আপত্তিটা এসেছে কারণ সে প্রকাশ্যে জল পান করেছে। খেলার সময় রোজা রাখা কঠিন। আমাদেরও অভিজ্ঞতা আছে। রোজার সময় ম্যাচ হলে পাকিস্তান দল ওয়াটার ব্রেকের সময় স্ক্রিনের পিছনে চলে যেত।”

তিনি আরও বলেন, “স্ক্রিনের পেছনে জল পান করা হতো বা যা করার দরকার ছিল, করতাম। কিন্তু সামনে প্রকাশ্যে করতাম না, যাতে সম্মান বজায় থাকে। আমার পরামর্শ হলো, শামিকে স্ক্রিনের সামনে জল পান করা উচিত হয়নি, সে পিছনে গিয়ে জল পান করতে পারতো। যদি কেউ সফরে থাকে, তবে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “খেলার সময় রোজা রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কাউকে খুশি করার জন্য রোজা রাখা বা না রাখার প্রশ্নই আসে না। বিশেষ করে ফাস্ট বোলারদের জন্য এটি আরও কঠিন। তাই একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি বলতে চাই, খেলার সময় রোজা রাখা খুব কঠিন কাজ।”

“সামনে খাবার-পানীয় গ্রহণ না করাই ভালো”

ইনজামাম বলেন, “আমার পরামর্শ হলো, প্রকাশ্যে খাবার বা জল পান করা উচিত নয়। যদি শামি স্ক্রিনের পেছনে জল পান করতো, তাহলে কোনো বিতর্ক হতো না।”

এর আগে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেও শামিকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। সেই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর শামি মাঠে বসেছিলেন, যা দেখে মনে হয়েছিল তিনি সেজদা করতে যাচ্ছেন, কিন্তু পরে তিনি উঠে দাঁড়ান। তখন অনেকে বলেন, তিনি বিতর্ক এড়াতে নিজেকে আটকে রেখেছিলেন।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় শামি এই বিতর্ক নিয়ে বলেন, “কেউ বলছে আমি সেজদা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু করিনি। কেউ বলছে দেশ ছেড়ে চলে যেতে। যার মাথায় যা আছে, সে তাই বলছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি কারও ভয়ে চলি না। আমি মুসলিম এবং এ নিয়ে আমি গর্বিত। একই সঙ্গে আমি ভারতীয় হওয়ার কারণেও গর্ব অনুভব করি। আমার কাছে দেশ সবার আগে। যদি এতে কেউ বিরক্ত হয়, তবে আমি পরোয়া করি না। আমি যদি সেজদা করতে চাইতাম, তবে করতাম।”

সাকলাইন মুশতাকের প্রতিক্রিয়া

শামির রোজা না রাখার বিতর্কে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার সাকলাইন মুশতাক বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না কেন আমরা এসব বিষয়ে এত মনোযোগ দিচ্ছি। আমাদের উচিত ভালো মানুষ হওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা আজকাল এমন সব বিষয় নিয়ে তর্ক করছি, যেগুলো একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এটি কেবল ভারতেই নয়, পাকিস্তানেও এই ধরনের প্রবণতা বাড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বিষয়টাকে বড় করা এবং বিতর্ক তৈরি করাটা একটা আর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এভাবেই বিখ্যাত হতে চায়, এবং সত্যিই তারা বিখ্যাতও হচ্ছে।”

সুনীল গাভাস্কারের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ইনজামাম

২৪ ফেব্রুয়ারি, ভারতীয় কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার স্পোর্টস টুডে-তে বলেন, “ভারতের বি-টিমও এখন পাকিস্তানকে হারাতে সক্ষম।” গাভাস্কারের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন ইনজামাম-উল-হক।

তিনি বলেন, “ভারত জিতেছে কারণ তারা ভালো খেলেছে, তবে গাভাস্কার সাহেবের উচিত ছিল কিছু ডেটা দেখা। একবার তো তাকে শারজাহতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে হয়েছিল, তখন তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “তিনি সিনিয়র হওয়ায় আমরা তাকে সম্মান করি, তবে একটি দেশ সম্পর্কে কথা বলার সময় এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। নিজের দলের প্রশংসা যত খুশি করুন, তবে অন্য দেশ সম্পর্কে খারাপ বলা উচিত নয়। আজও যদি পরিসংখ্যান দেখি, তাহলে বোঝা যাবে যে পাকিস্তান কতবার ভারতকে হারিয়েছে। গাভাস্কারের এই মন্তব্য আমাকে দুঃখ দিয়েছে, কারণ এটি তার সম্মানকেই কমিয়েছে।”

“ভাষার প্রতি সংযম থাকা উচিত”

ইনজামাম বলেন, “নিজের দেশের ও খেলোয়াড়দের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্য দেশের জন্য এমন মন্তব্য করবেন না। একটু ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত। আমি খুব কঠোর ভাষায় এই কথা বলছি।”

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে ভারত পাকিস্তান সফর করতে অস্বীকার করায় কিছু ম্যাচ দুবাইতে স্থানান্তরিত করতে হয়। ভারত তাদের সব ম্যাচ দুবাইতে খেলেছে এবং ফাইনালে পৌঁছানোয় ফাইনাল ম্যাচও দুবাইতেই অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের জনগণ ভারতের এই অবস্থানে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *