সংসদে উঠল সাইবার অপরাধ ও ব্যাংক প্রতারণার বিষয়, কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি

সংসদে উঠল সাইবার অপরাধ ও ব্যাংক প্রতারণার বিষয়, কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি

সাইবার অপরাধ, ব্যাংক প্রতারণা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসংখ্য মানুষ ইতোমধ্যেই এই ধরনের অপরাধের শিকার হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে, সোমবার (১০ মার্চ) রাজ্যসভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।

সংসদ সদস্যদের উদ্বেগ ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

সদস্যরা সংসদে এসব সমস্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সরকারের কাছে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

বিজেপির সদস্য সঞ্জয় সেঠ শূন্যকাল পর্বে সাইবার অপরাধ ও ব্যাংক প্রতারণার ক্রমবর্ধমান ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এই ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য ফাস্ট-ট্র্যাক আদালত গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রচুর মানুষ ডিজিটাল ও অনলাইন পেমেন্ট ব্যবহার করেন, কিন্তু যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে সাইবার প্রতারণার শিকার হন এবং নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ হারান।

‘সাইবার প্রতারণার কারণে আত্মহত্যা’

সঞ্জয় সেঠ একটি ঘটনার উল্লেখ করেন, যেখানে এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা সাইবার প্রতারণার শিকার হয়ে হারান এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি আরও বলেন, প্রবীণ নাগরিকরাও এই ধরনের প্রতারণার কারণে তাদের পেনশন হারাচ্ছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ডিজিটাল ইন্ডিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ব্যাংক, বিশেষ করে ছোট ও গ্রামীণ ব্যাংকগুলোর সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ওপরও তিনি গুরুত্ব দেন।

ভুক্তভোগীদের জন্য ফাস্ট-ট্র্যাক আদালতের দাবি

বিজেপি সদস্য সেঠ বলেন, ভুক্তভোগীদের দ্রুত বিচার পাইয়ে দিতে বিশেষ ফাস্ট-ট্র্যাক আদালত গঠন করা উচিত। পাশাপাশি, তিনি সাইবার প্রতারণার শিকারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন। তিনি সরকারের কাছে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান যাতে নাগরিকদের কষ্টার্জিত উপার্জন সুরক্ষিত থাকে।

‘সোশ্যাল মিডিয়ায় গালাগালি, ভুয়া তথ্য ছড়ানো উদ্বেগজনক’

অন্যদিকে, বিজেপির কল্পনা সাইনি সংসদে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমবর্ধমান গালাগালি, অশ্লীল ভাষা, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এবং সাইবার হয়রানির বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও হোয়াটসঅ্যাপ মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলেও এগুলোর ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে।

তিনি বলেন, সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি নারী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মীরা প্রতিদিন অনলাইন হয়রানি ও চরিত্র হননের শিকার হচ্ছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, যার ফলে ভুক্তভোগীদের মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে এই হয়রানি আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিজেপি সদস্য বলেন, ভুয়া খবর ও বিদ্বেষমূলক বার্তা সমাজে অস্থিরতা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাই, এগুলো রোধ করতে কঠোর আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তিনি সরকারের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ায় গালাগালি ও অশ্লীল ভাষা ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং সাইবার অপরাধের তদন্ত ও শাস্তি প্রক্রিয়াকে কার্যকর করার দাবি জানান।

অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে জাতীয় আইন প্রণয়নের দাবি

এদিকে, আম আদমি পার্টির (আপ) সদস্য বিক্রমজিৎ সিং সাহনি রাজ্যসভায় কালো জাদু ও অন্ধবিশ্বাসের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং এর বিরুদ্ধে জাতীয় পর্যায়ে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানান।

শূন্যকাল পর্বে তিনি বলেন, এই ধরনের কুসংস্কারের ফলে অনেক মানুষ ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হন। বিশেষ করে, গ্রামের দরিদ্র ও কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সহজেই প্রতারণার শিকার হন।

সাহনি বলেন, এটি সমাজের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং দেশের ঐক্য ও সম্প্রীতির জন্য বড় হুমকি। তিনি উল্লেখ করেন, মহারাষ্ট্র কালো জাদু ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখন সময় এসেছে সমগ্র দেশের জন্য এমন কঠোর আইন প্রণয়ন করা, যা শুধু অন্ধবিশ্বাস রোধ করবে না, বরং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতেও কার্যকর হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *