‘ধর্ষণ প্রমাণের জন্য ব্যক্তিগত অংশে আঘাতের চিহ্ন থাকা জরুরি নয়’, সুপ্রিম কোর্ট ৪০ বছরের পুরনো মামলায় রায় ঘোষণা করল

সুপ্রিম কোর্ট ৪০ বছর পুরনো ধর্ষণের একটি মামলায় রায় ঘোষণার সময় গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে যে, ধর্ষণ প্রমাণের জন্য ব্যক্তিগত অংশে আঘাতের চিহ্ন থাকা অপরিহার্য নয়।
এই প্রমাণের জন্য অন্যান্য সাক্ষ্যও ভিত্তি হিসেবে ধরা যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট টিউশন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারই এক ছাত্রীর সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করার ট্রায়াল কোর্টের রায় বহাল রেখেছে।
শিক্ষকের দাবি ছিল যে, ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত অংশে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, তাই ধর্ষণ প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তার আরও দাবি ছিল যে, ভুক্তভোগীর মা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।
এই মামলার শুনানি করছিলেন বিচারপতি সন্দীপ মেহতা, বিচারপতি ভারালে এবং বিচারপতি প্রসন্ন বি-এর বেঞ্চ। বেঞ্চ বলেছে, মেডিকেল রিপোর্টে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবে অন্যান্য সাক্ষ্য প্রমাণকে উপেক্ষা করা যায় না। বিচারপতি ভারালে বলেছেন যে, ধর্ষণের প্রতিটি মামলায় ভুক্তভোগীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকতেই হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। প্রতিটি মামলা নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। তাই ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণের জন্য ভুক্তভোগীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
শিক্ষকের অভিযোগ নিয়ে বেঞ্চ কী বলল?
শিক্ষকের অভিযোগ যে ভুক্তভোগীর মা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন, সে বিষয়ে বেঞ্চ বলেছে যে, এই ধরনের অভিযোগের মধ্যে যাওয়ার কোনো অর্থ হয় না। আদালত বলেছে, আমাদের সামনে এমন কোনো কারণ নেই যা বোঝায় যে, মা তার নিজের মেয়েকে ভুক্তভোগী বানিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করবেন।
কী এই ৪০ বছর পুরনো মামলা?
এই ঘটনা ১৯৮৪ সালের। অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯ মার্চ ১৯৮৪ সালে টিউশন শিক্ষক দুটি ছাত্রীকে বাইরে পাঠিয়ে দেন এবং এরপর ভুক্তভোগীর সঙ্গে ধর্ষণ করেন। যেসব ছাত্রীরা বাইরে ছিলেন, তারা দরজায় কড়া নাড়েন, কিন্তু দরজা খোলা হয়নি। এরপর ভুক্তভোগীর দাদী এসে তাকে উদ্ধার করেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার যখন এফআইআর দায়ের করতে যায়, তখন অভিযুক্ত পক্ষ থেকে তাদের হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার কয়েকদিন পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়।
মাত্র ২ বছরেই ট্রায়াল কোর্টের রায়
এই মামলায় ১৯৮৬ সালে ট্রায়াল কোর্ট অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। অভিযুক্ত এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এলাহাবাদ হাইকোর্টে যায়। উচ্চ আদালত ট্রায়াল কোর্টের রায়কে বৈধ ঘোষণা করতে ২৬ বছর সময় নিয়েছিল। এরপর অভিযুক্ত যখন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে, তখন শীর্ষ আদালত ১৫ বছর পর ট্রায়াল কোর্টের রায়কেই সঠিক বলে ঘোষণা করে।