মহু হিংসার বিষয়ে শহরের কাজীর বড় বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়ার জয়ের নামে আপনি মসজিদকে…’
মহু হিংসা নিয়ে কাজীর বক্তব্য:
মধ্যপ্রদেশের মহুতে রবিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় হঠাৎ করে হিংসার ঘটনা ঘটে, যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় দলের জয়ের পর মানুষ রাস্তায় নেমে উৎসব করতে শুরু করে এবং একটি বিজয় মিছিল বের করা হয়।
মিছিলটি যখন মসজিদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ করে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে, যার ফলে আনন্দের পরিবেশ মুহূর্তেই উত্তেজনায় পরিণত হয় এবং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।
এই ঘটনার বিষয়ে এবিপি নিউজ শহরের কাজীর সঙ্গে কথা বলে। মহুর ঘটনায় কাজী বলেন যে, “নামাজ শেষে মানুষ মসজিদ থেকে বের হচ্ছিল। সেই সময় মিছিলের শেষ অংশটি যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে কেউ একজন সুতলি বোমার মতো কিছু ছুঁড়ে দেয়। তখনই পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। আমি বাইরে বেরিয়ে দেখি, যারা সুতলি বোমাটি ছুঁড়েছিল, তাদের ঘিরে রাখা হয়েছে এবং কিছু লোক তাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করছে। সেখানে দুইজন পুলিশ কর্মী উপস্থিত ছিলেন। আমি পুলিশ কর্মীদের সহায়তায় সেই ব্যক্তিকে রক্ষা করে বাড়ি পাঠিয়ে দিই।”
‘আমি থানায় বসে কথা বলব, কিন্তু তারপর পাথর ছোঁড়া শুরু হয়’
কাজী আরও বলেন, “তারপর কিছু মানুষ এসে আমাকে প্রশ্ন করতে লাগল যে, আপনি তো সম্মানীয় ব্যক্তি, আপনার উপস্থিতিতে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল? তারা বলেন যে, তারা থানায় গিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলবে। আমি বললাম, ‘আপনারাও থানায় যান, আমিও আসছি, সেখানেই আলোচনা করব।’ কিন্তু এরপরই তারা থানায় গিয়ে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আবার পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে।”
‘পুলিশ যেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে’
উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে যে, প্রথমে অন্যপক্ষ থেকে পাথর ছোঁড়া হয়েছে। এই বিষয়ে কাজী বলেন, “এটা তো নয় যে, সেখানে কোনো ক্যামেরা ছিল না। প্রশাসনের দায়িত্ব হলো উভয় পক্ষের ক্যামেরা ফুটেজ খতিয়ে দেখা এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করা। এতে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমি প্রত্যক্ষদর্শী, আমি যা দেখেছি, তা তো মিথ্যা বলতে পারব না।”
‘মিছিলের কিছু নিয়ম-কানুন থাকা উচিত’
প্রশ্ন উঠছে, “টিম ইন্ডিয়ার জয়ের বিজয় মিছিল তো যেকোনো জায়গা দিয়ে যাওয়া যেত। তাহলে কেন এই মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল?”
এর জবাবে কাজী বলেন, “আপনারা চাইলে প্রতিদিন সকাল-বিকেল জয়ের মিছিল বের করতে পারেন, আমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যান। তবে, মিছিলের একটা নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকা দরকার। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কি মিছিল বের করা যায়? ধর্মীয় স্থানের সামনে পুলিশি উপস্থিতি ছাড়া কি কোনো মিছিল বের হতে পারে?”
‘ধর্মীয় স্থানের প্রতি আসাম্মান চলবে না’
কাজী বলেন, “এখানে যে ভুল হয়েছে, তা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে – সেটাই আসল বিষয়। এটা শুধু মসজিদের ব্যাপার নয়, এটা দেশের জয়ের বিষয়ও নয়। যদি কোনো দলের জয় আপনাকে আনন্দ দেয় এবং আপনি মনে করেন এটি দেশহিতকর, তাহলে অবশ্যই উদযাপন করুন। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে, ধর্মীয় স্থানগুলোর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ইন্ডিয়ার জয়ের নামে আপনি মসজিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রকাশ করতে পারেন না। ধর্মীয় স্থানের প্রতি কোনো রকমের আসাম্মান করা যাবে না।”
‘শিশুসুলভ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে’
মহুর এই সংঘর্ষের কারণে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ আরও গভীর হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কাজী বলেন, “আমি বারবার সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আগে যেমন সম্প্রীতির পরিবেশ ছিল, এখন তার চেয়েও ভালো পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে, কিন্তু যদি সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে আসেন এবং শিশুসুলভ মানসিকতা ত্যাগ করেন, তাহলে অনেক কিছুই সম্ভব।”
‘সংঘর্ষের শুরু ওদের দিক থেকেই হয়েছিল’ – কাজী
দুই পক্ষই কি ভুল করেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে কাজী বলেন, “ভুল সবসময় দুই দিক থেকেই হয়ে থাকে। এই ঘটনায় পাথর ছোঁড়া হয়েছে, ফুল ছোঁড়া হয়নি। কেউ একেবারে নির্দোষ ছিল না। আমি স্পষ্টভাবে বলছি, সংঘর্ষের শুরু ওদের দিক থেকেই হয়েছিল, কিন্তু একবার শুরু হয়ে যাওয়ার পর দুই দিক থেকেই পাথর ছোঁড়া হয়েছে। কেউ কাউকে ফুল দেয়নি।”