ভারতে থাকত ‘সাপের রাজা’ বাসুকি, ৪ কোটি বছর আগে সৃষ্টি করেছিল আতঙ্ক, বিজ্ঞানীরা পাতাল থেকে উদ্ধার করলেন!

আমরা বাসুকি নাগের নাম শুধু পৌরাণিক কাহিনিতে শুনেছি। কিন্তু প্রাচীনকালে ভারতের মাটিতে এক বিশালাকায় সাপ বাস করত, যা বিশ্বের দীর্ঘতম সাপগুলোর মধ্যে একটি। গত বছর প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, এই প্রাগৈতিহাসিক সাপের দৈর্ঘ্য ১০.৯ মিটার থেকে ১৫.২ মিটার পর্যন্ত ছিল।
ভারতে এই সাপ ৪.৭ কোটি বছর আগে রাজত্ব করত। বিজ্ঞানীরা যখন এই বিশাল সাপের জীবাশ্ম দেখলেন, তখন তারা হতবাক হয়ে যান, কারণ এটি ছিল এক নতুন আবিষ্কার। বিজ্ঞানীরা এটিকে ‘বাসুকি ইন্ডিকাস’ নাম দিয়েছেন। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে আজকের এনাকোন্ডা ও অজগর এই সাপের তুলনায় ছোট। এই গবেষণা ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রুরকি (IIT) -এর গবেষকরা ২০০৫ সালে গুজরাটের একটি কয়লা খনিতে পাওয়া ২৭টি জীবাশ্মযুক্ত কশেরুকার বিশ্লেষণ করেন। প্রথমে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন এটি প্রাচীন কুমিরের মতো কোনো প্রজাতি, তবে পরে নিশ্চিত হন যে এটি ছিল এক বিশালাকায় সাপ। কশেরুকার গঠন বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বুঝতে পারেন যে বাসুকি ইন্ডিকাসের শরীর ছিল চওড়া এবং নলাকার। যদিও এর সম্পূর্ণ কঙ্কাল পাওয়া যায়নি, তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে এই সাপটি কলম্বিয়ার ১৩ মিটার দীর্ঘ ‘টাইটানোবোয়া’ সাপের সমপর্যায়ের, যা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কিভাবে এত বড় হয়ে উঠল?
গবেষকদের মতে, সাপ হল শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। এদের বিপাকক্রিয়া (metabolism) পরিবেশের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে সেই সময়ে উষ্ণ ক্রান্তীয় জলবায়ু বিদ্যমান ছিল, যার কারণে সেখানকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি সাপের বিশাল আকৃতির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। গবেষণার লেখকরা বলেন, ‘সাপের শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তিত হয়। উচ্চ তাপমাত্রা বাসুকির শরীরের তাপমাত্রা এবং বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে দিয়েছিল, যার ফলে এটি এত বিশাল আকৃতি লাভ করতে পেরেছে।’
কী খেত বাসুকি?
গবেষণা অনুযায়ী, বাসুকি ইন্ডিকাস ছিল এক শিকারী সাপ, যা মূলত স্থলে বাস করত এবং শিকারের জন্য ওঁৎ পেতে থাকত। এটি নিজের শরীর ব্যবহার করে শিকারকে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করত। এর জীবাশ্ম সেই শিলাস্তরে পাওয়া গেছে, যেখানে রে ফিশ, ক্যাটফিশ, কচ্ছপ, কুমির এবং প্রাচীন তিমির জীবাশ্মও আবিষ্কৃত হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না বাসুকি কী ধরনের প্রাণী শিকার করত, তবে সম্ভবত এটি ওই প্রাণীগুলোকেই শিকার করত।’