আমেরিকায় মন্দার ভয়ের প্রভাব! শেয়ার বাজারে হাহাকার, টেসলা প্রায় ৪৫% পড়ে গেল

আমেরিকায় মন্দার ভয়ের প্রভাব! শেয়ার বাজারে হাহাকার, টেসলা প্রায় ৪৫% পড়ে গেল

আমেরিকান শেয়ার বাজারে সোমবার, অর্থাৎ ১০ মার্চ, ব্যাপক বিক্রির চাপ দেখা গেছে। বছরের পর বছর পর বাজারে একদিনে এত বড় পতন দেখা গেছে। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৮৯০ পয়েন্ট পড়ে গেছে, যা আগে ১,১০০ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল।

এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে ২.৭% পতন হয়েছে, আর নাসডাক কম্পোজিট ৪% কমেছে, যা সেপ্টেম্বর ২০২২ সালের পর থেকে এটি সবচেয়ে বড় এক দিনের পতন।

আমেরিকান বাজারে মন্দার আতঙ্ক

বাজারের পতনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধানত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি, বিশেষ করে তাঁর শুল্ক নীতির (ট্যারিফ স্ট্র্যাটেজি) প্রতি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ। তাছাড়া, এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প মন্দার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি, বরং বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থাকে “সংক্রমণকাল” বলে বর্ণনা করেছেন। এই অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও ব্যাপক বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে।

আইটি স্টকগুলোর বড় পতন

ভারী বিক্রির কারণে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে বড় ক্ষতি হয়েছে, যার ফলে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও নাসডাক কম্পোজিট সূচক নিচে নেমে গেছে। গুগল-মালিকানাধীন অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, অ্যাপল, মেটা, মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া এবং টেসলার মতো বড় প্রযুক্তি কো ম্পা নির শেয়ারগুলো লাল সংকেতে (নিম্নমুখী) বন্ধ হয়েছে।

এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১৯ ফেব্রুয়ারি তৈরি করা তার সর্বোচ্চ স্তর থেকে ৮.৬% নিচে এসে দিনের সবচেয়ে কম পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে।

সোমবার টেসলার শেয়ারে ১৫.৪% পতন হয়েছে। নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর লাভজনক ফলাফল থাকা সত্ত্বেও টেসলার শেয়ারে এই বছর প্রায় ৪৫% পতন হয়েছে। সিইও এলন মাস্কের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং ইউরোপে বিক্রি কমার কারণে টেসলার শেয়ারের ওপর চাপ বেড়েছে।

বিটকয়েনে বড় সংশোধন (করেকশন)

ওয়াল স্ট্রিটের ঝুঁকি পরিমাপের সূচক বলে পরিচিত VIX সূচক বাজারের অস্থিরতার মধ্যে এই বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিটকয়েনেও বড় পতন দেখা গেছে, যা নেমে ৭৮,০০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এটি নভেম্বরের পর থেকে বিটকয়েনের সবচেয়ে নিচু স্তর, কারণ বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকছে।

শুল্ক নীতি ও অর্থনীতি

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বাজারের অনিশ্চয়তার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি চীনা আমদানির উপর শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ২০% করার এবং ১২ মার্চ থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানিতে ২৫% শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি কানাডার দুগ্ধজাত পণ্য ও কাঠের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ১০-বছরের ইয়িল্ড (বিনিয়োগের রিটার্ন) কমে ৪.২২৫% এ এসে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন সপ্তাহের শেষে প্রকাশিত হতে চলা মূল্যস্ফীতির (ইনফ্লেশন) তথ্যের দিকে নজর রাখছে।

আমেরিকান বাজারের এই বড় পতনের সঙ্গে সম্পর্কিত ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১: আমেরিকান শেয়ার বাজারের বর্তমান বিক্রির কারণ কী?
উত্তর-১: এই বিক্রির প্রধান কারণ হল বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কসহ তাঁর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অর্থনীতিকে কতটা চাপে ফেলতে পারেন।

প্রশ্ন-২: সাম্প্রতিক লেনদেনের সময় এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে কতটা পতন হয়েছে?
উত্তর-২: দুপুরের লেনদেন চলাকালীন এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৩.২% কমে গেছে, যা ২০২২ সালের উচ্চ মূল্যস্ফীতির পর থেকে সবচেয়ে বড় পতন।

প্রশ্ন-৩: শুল্ক নীতির মার্কিন অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়ছে?
উত্তর-৩: শুল্কের কারণে বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, যা মার্কিন কো ম্পা নি এবং ভোক্তাদের জন্য অর্থনৈতিক অস্থিরতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

প্রশ্ন-৪: বর্তমানে মার্কিন চাকরির বাজারের অবস্থা কী?
উত্তর-৪: মার্কিন চাকরির বাজার এখনো স্থিতিশীল নিয়োগ কার্যক্রম বজায় রেখেছে, যা বাজারের অস্থিরতার মধ্যেও কিছুটা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।

প্রশ্ন-৫: মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গোল্ডম্যান স্যাকসের সংশোধিত পূর্বাভাস কী?
উত্তর-৫: গোল্ডম্যান স্যাকস ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২.২% থেকে কমিয়ে ১.৭% করেছে, যার প্রধান কারণ হল প্রত্যাশিত উচ্চ শুল্ক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *