ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান চীনের প্রতারণা ফাঁস করলেন!

ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান চীনের প্রতারণা ফাঁস করলেন!

এই বছরের শুরুতে, চীনের সেনাবাহিনী দাবি করতে শুরু করেছিল যে বেইজিং সর্বাধুনিক ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান অর্জন করেছে। যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে আকাশে চীনের তুলনায় এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না।

চীনা মিডিয়াও এই দাবিকে তুলে ধরেছিল। তবে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ এই প্রচারণাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

তিনি স্পষ্ট করেছেন যে শুধু অস্ত্রাগারে যুদ্ধবিমান থাকলেই চলবে না, উপযুক্ত কৌশলও অত্যন্ত জরুরি। তার মতে, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই বিষয়ে অযথা প্রচুর বিতর্ক হচ্ছে।

বর্তমানে ভারতের কাছে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে। তাহলে কি ভারত চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, “চীন দাবি করছে যে তাদের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে। তবে এই দাবির সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। একটি যুদ্ধবিমান শুধু তৈরি হওয়া বা উড়তে পারলেই যথেষ্ট নয়। তার সক্ষমতাও থাকতে হবে। সেটিকে বহুমুখী কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হতে হবে। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য দক্ষতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহের মতে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শুধু প্রযুক্তিই যথেষ্ট নয়, বরং উপস্থিত বুদ্ধি ও দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৌশল প্রতি মুহূর্তে বদলাতে হয়। যদিও ভারতের কাছে এখনও ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নেই, ভারতীয় বিমানবাহিনীর সামর্থ্য ষষ্ঠ প্রজন্মের সমান বলে তিনি মনে করেন। তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে চীনের মোকাবিলার জন্য এটি যথেষ্ট হবে। তার পরামর্শ, প্রযুক্তিগত ব্যবধান কমাতে আধুনিক যুদ্ধ কৌশলকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে ষষ্ঠ প্রজন্মের স্কোয়াড রয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সেটাই যথেষ্ট। আকাশেই আমরা তার প্রমাণ দিতে পারব।”

ভাইরাল হল চীনের যুদ্ধবিমানের ছবি

সরল ভাষায় বলতে গেলে, যুদ্ধবিমানের প্রজন্ম যত বাড়ছে, তারা ততই আধুনিক হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কাছে চতুর্থ প্রজন্মের রাফাল এবং তেজস রয়েছে। ভারত বর্তমানে পঞ্চম প্রজন্মের অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) তৈরি করছে। চীনের কাছে দুটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে—চেংদু J-20 এবং শেনইয়াং J-35। চীন দাবি করেছে যে এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম প্রজন্মের F-35 যুদ্ধবিমানের চেয়েও বেশি কার্যকর। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

তাদের মতে, চীনা মিডিয়া সবসময় কমিউনিস্ট পার্টির প্রচারণাকে উৎসাহিত করে। গত ডিসেম্বরে, চীনের আকাশে দুটি J-36 যুদ্ধবিমানের ছবি ফাঁস হয় এবং চীনা মিডিয়ায় তা প্রকাশিত হয়। সেই ছবি দেখে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বেইজিং দাবি করেছিল যে এগুলো ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। যদিও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা চীনের দাবিকে সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দেননি, তারা মনে করেন যে চীন প্রায়শই ভিত্তিহীন প্রচারণার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল গ্রহণ করে। এটি আধুনিক যুদ্ধের একটি অংশ, যাকে মানসিক কৌশল বলা হয়।

বর্তমানে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয়েই চীনের বিমানবাহিনীর কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজর রাখছে। তবে আত্মতুষ্টির কোনো জায়গা নেই বলে সতর্ক করেছেন ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান। পাশাপাশি, যুদ্ধবিমান তৈরিতে দেরি হওয়ার জন্য তিনি হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL)-কে কড়া সমালোচনা করেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *