বলুচিস্তান থেকে এক চাঞ্চল্যকর খবর সামনে এসেছে। বলুচ লিবারেশন আর্মি (BLA) পাকিস্তানে সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনার পর বলা হচ্ছে, বলুচিস্তান স্বাধীনতার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

এখন তো আমেরিকাও একটি বড় ঘোষণা করেছে। বলুচ লিবারেশন আর্মি দাবি করেছে যে তারা পাকিস্তানের একটি ট্রেন, জাফর এক্সপ্রেস হাইজ্যাক করেছে। এই ট্রেনে পাকিস্তানের ৪৫০ জন যাত্রীকে বন্দি করা হয়েছে। বলুচ লিবারেশন আর্মি সতর্ক করে দিয়েছে, যদি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করে, তাহলে সকল যাত্রীকে হত্যা করা হবে। বলুচিস্তানের কাচ্চি জেলার মাচ টাউনের আব-এ-গাম এলাকায় ট্রেনটি হাইজ্যাক করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ছয়জন সশস্ত্র ব্যক্তি ট্রেনে গুলি চালায়, যার ফলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তথ্য অনুসারে, BLA-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এয়ার স্ট্রাইকের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এয়ার এস্যেট মোতায়েন করা হয়েছে।

ট্রেনে ISI ও পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত

ট্রেন হাইজ্যাক করার সময় বলুচ আর্মি পাকিস্তানের ১১ জন সেনাকে হত্যা করেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ট্রেনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, পুলিশ, সন্ত্রাস দমন ইউনিটের কর্মকর্তা এবং ISI-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন। বলা হচ্ছে, ট্রেনে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সংখ্যা ১৮২-এর বেশি।

এই সকল কর্মকর্তা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ছুটিতে যাচ্ছিলেন। বলুচ লিবারেশন আর্মি ট্রেনে থাকা এই পাকিস্তানি কর্মকর্তাদেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, সামান্যতম নড়াচড়া করলেই সকল যাত্রীকে হত্যা করা হবে।

তবে জানা গেছে, বলুচ আর্মি এই ট্রেন থেকে মহিলাদের ও শিশুদের মুক্ত করে দিয়েছে। বলুচ লিবারেশন আর্মির আত্মঘাতী স্কোয়াড এবং মজিদ ব্রিগেড এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

পাঁচটি সংগঠনের একজোট হওয়া

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিছুদিন আগেই বলুচ আর্মি ঘোষণা করেছিল যে তারা পাকিস্তানে হামলার কৌশল পরিবর্তন করবে। কয়েকদিন আগেই বলুচিস্তান ও সিন্ধ প্রদেশের পাঁচটি সংগঠন পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সংগঠন বলুচিস্তানের এবং দুটি সিন্ধ প্রদেশের।

তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার—বলুচিস্তান ও সিন্ধ প্রদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করা। তারা ইতোমধ্যেই তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিছুদিন আগে পাকিস্তানের সংসদেও এই বিষয়ে বলা হয়েছিল যে, বলুচিস্তান থেকে পাঁচ থেকে সাতটি প্রদেশ নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করতে চলেছে।

বলুচিস্তানে এক বছরে হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি

গত এক বছরে বলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হয়েছিল।

তেল ও খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ বলুচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে এটি সবচেয়ে কম জনবহুল। ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদের কবলে রয়েছে। বলুচ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি প্রায়শই নিরাপত্তা বাহিনী, সরকারি প্রকল্প এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC)-এর ৬০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে।

আমেরিকা কী বড় ঘোষণা করেছে

এই ট্রেন হাইজ্যাকের আগেই আমেরিকা বলুচিস্তান নিয়ে একটি বড় ঘোষণা করেছিল। আমেরিকা তার নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তারা যেন বলুচিস্তানে না যায়, কারণ সেখানে বড় কিছু ঘটতে চলেছে।

বলুচিস্তানে স্বাধীনতার লড়াইকে বিবেচনা করে আমেরিকা তাদের নাগরিকদের জন্য একটি ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি জারি করেছিল। আমেরিকা পাকিস্তানকে বিশ্বের বিপজ্জনক দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং তার নাগরিকদের পাকিস্তান সফর এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

O