পাকিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাক: ভারতের পুরনো ক্ষতকে আবার উসকে দিল, বন্দুকের নিশানায় যাত্রীদের জীবন… রাজধানী এক্সপ্রেসের সেই ভয়াবহ যাত্রা

ট্রেন হাইজ্যাক: পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন সন্ত্রাসীদের কবলে
ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন সন্ত্রাসীদের দ্বারা হাইজ্যাক করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা প্রথমে ট্রেনটিকে একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে নিয়ে যায় এবং তারপর এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। পাকিস্তানের জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাক হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ট্রেনটিতে ৪০০-র বেশি যাত্রী ছিলেন। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস (Jaffar Express Hijack) হাইজ্যাক করে পাকিস্তানের রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ্যে এনেছে। ট্রেন হাইজ্যাকের পর পাকিস্তানি সেনা ও বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
তবে এই ঘটনা শুধুমাত্র পাকিস্তানেই নয়, অতীতে ভারতেও ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনা ঘটেছে। ভারতের রেলওয়ে ট্রেনগুলোকেও আগে জিম্মি করা হয়েছিল।
ভারতে ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনা
পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ট্রেন হাইজ্যাকের দায় নিয়েছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। তবে ভারতেও অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে পাকিস্তানের মতোই কয়েক বছর আগে মাওবাদীরা একটি পুরো ট্রেন হাইজ্যাক করেছিল।
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে মুম্বাই-হাওড়া প্রধান রেলপথে চলন্ত জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যখন জানা যায় যে ট্রেনটি হাইজ্যাক হয়েছে। এটি ছিল ভারতের প্রথম বড় ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনা, যেখানে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা পুরো ট্রেন দখল করে।
এই হাইজ্যাকের মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্ত উপেন্দ্র সিং ওরফে কাবরাকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া। এই ঘটনা ২০০১ সালের ব্যবসায়ী জয়চাঁদ ব্যাধ অপহরণ মামলার সাথে যুক্ত ছিল, যেখানে পুলিশ উপেন্দ্র সিং ওরফে কাবরাকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
জেল ভেঙে পালিয়ে যাওয়া কাবরা পুরো জনশতাব্দী ট্রেনকে ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। দীর্ঘ সময় ধরে সেনা ও পুলিশের প্রচেষ্টায় ট্রেনের সব যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
২০০৯ সালে ট্রেন হাইজ্যাক
২০০৯ সালেও ভারতে আরেকটি বড় ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র মাওবাদীরা ভুবনেশ্বর-রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাইজ্যাক করেছিল। প্রায় ৩০০-৪০০ মাওবাদী সদস্য পুরো ট্রেন দখল করে এবং শত শত যাত্রী ও রেলকর্মীদের কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্দী করে রাখে।
এই হাইজ্যাকের পেছনে ছিল মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতো। মাওবাদীদের দাবি ছিল যে ছত্রধর মাহাতোকে মুক্তি দিতে হবে। নিজেদের নেতাকে মুক্ত করার জন্য তারা অস্ত্রের জোরে পুরো ট্রেনকে জিম্মি করে ফেলে। যাত্রীদের মারধর করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে লুটপাট করা হয়।
ট্রেনের উপর গুলি চালিয়ে হাইজ্যাক
জুন ২০১৩ সালে বিহারের জামুই জেলায় মাওবাদীরা প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে একটি সম্পূর্ণ ট্রেনকে হাইজ্যাক করে। ১৩৩৩১ ধানবাদ-পাটনা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসকে তারা কয়েক ঘণ্টার জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ড্রাইভারকে বন্দী করে মাওবাদীরা পুরো ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। যাত্রীদের কাছ থেকে লুটপাট করা হয় এবং এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন যাত্রী গুরুতর আহত হন।