১২,০০০ ফুট উচ্চতা এবং ১৫ ফুট বরফ… ৩ যুবক কীভাবে চূড়ধার থেকে ১৪ দিন ধরে নিখোঁজ যুবককে খুঁজে পেল?

শিমলা: হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে মহাশিবরাত্রির দিন নিখোঁজ হওয়া অক্ষয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও মৃতদেহের আনুষ্ঠানিক পরিচয় নিশ্চিত করা বাকি রয়েছে, তবে মনে করা হচ্ছে এটি অক্ষয়েরই দেহ।
চূড়ধারে ভোলেনাথের মন্দির থেকে প্রায় ২০০ মিটার নিচে বরফের নিচে চাপা ছিল এই দেহ, যা নওহরাধারের তিন যুবক খুঁজে বের করেছেন।
সিরমৌরের নওহরাধারের তিন যুবক হংসরাজ, হরীশ চৌহান এবং তপেন্দ্র সোমবার সকালে চূড়ধারের উদ্দেশে বের হন এবং সেখানে গিয়ে তারা এক মৃতদেহ খুঁজে পান। যুবকরা সেই মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন এবং দেখান কীভাবে এবং কোথায় দেহটি বরফের নিচে চাপা ছিল। পরে তারা প্রশাসনকে বিষয়টি জানায়।
ঘটনাটি এমন ছিল যে, যখন ওই তিন যুবক চূড়ধার শৃঙ্গের দিকে যাচ্ছিল, তখন তারা নিচে কিছু কাক দেখতে পান এবং সন্দেহ হয়। এরপর তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বরফের নিচে একটি দেহ দেখতে পান। যুবকদের তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে যে, বরফের নিচে চাপা পড়া যুবকের নাক খাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে প্রশাসন মঙ্গলবার মৃতদেহটি নওহরাধার নিয়ে আসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
১২,০০০ ফুট উচ্চতায় চূড়ধার এবং নিখোঁজ অক্ষয়ের গল্প
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার ১২,০০০ ফুট উচ্চতায় শিরগুল মহারাজের মন্দির অবস্থিত। মন্দির থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ভোলেনাথের একটি মূর্তি রয়েছে। ১৪ দিন আগে, মহাশিবরাত্রির দিনে, হরিয়ানার পঞ্চকুলার যুবক অক্ষয় তার বন্ধু বিক্রমের সঙ্গে এখানে প্রণাম করতে এসেছিল। দুজন যখন প্রায় শৃঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ অক্ষয় নিখোঁজ হয়ে যায়।
প্রথম সপ্তাহে পুলিশ ও প্রশাসন তার সন্ধান চালায়, কিন্তু অতিরিক্ত তুষারপাত এবং প্রবল বাতাসের কারণে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করতে হয়। এখনো এখানে প্রায় ১৫ ফুট বরফ রয়েছে।
অক্ষয় পঞ্চকুলার সেক্টর-১৫-তে থাকত এবং তার বন্ধু বিক্রম সেক্টর-১২-এর বাসিন্দা ছিল। তারা দুজন আগেও চূড়ধার ট্রেক করেছিল। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়, মন্দির থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে থাকতেই অক্ষয় নিখোঁজ হয়ে যায়।
বালজিৎ কৌরের নেতৃত্বে অনুসন্ধান অভিযান
এদিকে, হিমাচল প্রদেশের সোলানের মামলিগের মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়ী পর্বতারোহী বালজিৎ কৌর নিখোঁজ যুবকের সন্ধানে একটি দল গঠন করেন এবং খোঁজ শুরু করেন। তবে, সোমবার তার দলের চূড়ধার পৌঁছানোর আগেই তিন যুবক এক মৃতদেহ খুঁজে পান।
বালজিৎ কৌর মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন— “আমরা জানি যে, ১৪ দিন আগে চূড়ধারে একটি ঘটনা ঘটেছিল যেখানে এক ট্রেকার নিখোঁজ হয়। আমাদের আট সদস্যের দল গতকাল দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অনুসন্ধান চালায় এবং একটি মৃতদেহ শনাক্ত করে। কিন্তু আমরা এখনো ছবি বা ভিডিও শেয়ার করতে পারছি না, কারণ আমাদের আগে স্থানীয় পুলিশের সাথে পরিচয় ও যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা আপনাদের আপডেট দেব। অভিযান এখনো চলছে এবং পুরো দল ও মৃতদেহ নিরাপদে নওহরাধার পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত এটি শেষ হবে না।”
এটি মনে করা হচ্ছে যে, উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ অক্ষয়েরই, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে এখানে আর কেউ নিখোঁজ হয়নি।
বরফের নিচে চাপা পড়া পোশাক ও ব্যর্থ উদ্ধার অভিযান
নিখোঁজ যুবকের সন্ধানে SDRF এবং পর্বতারোহণ দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল। কিন্তু প্রচণ্ড তুষারপাত ও তুষারধ্বসের ঝুঁকির কারণে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। এখানে বাতাস এতটাই প্রবল ছিল যে, উঁচু থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, যার ফলে অভিযান বন্ধ করতে হয়।
প্রসঙ্গত, সিরমৌরের নওহরাধার থেকে এই ট্রেক শুরু হয় এবং প্রায় ১৮ কিমি পাহাড়ি পথ অতিক্রমের পর মন্দিরে পৌঁছানো যায়। এই পথ পাড়ি দিতে সাধারণত ৮ ঘণ্টা হাঁটতে হয়। শীতকালে এই অঞ্চল সম্পূর্ণ বরফে ঢাকা পড়ে এবং এখানে যাতায়াত নিষিদ্ধ থাকে। তবে, কিছু ট্রেকার অনুমতি না নিয়েই এখানে প্রবেশ করে এবং হারিয়ে যায়।
গ্রীষ্মকালে এখানে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে। বলা হয়, চূড়ধার শৃঙ্গ থেকে বর্বরিক মহাভারতের যুদ্ধ দেখেছিলেন।