হোলি ২০২৫: ১৪ না ১৫ মার্চ? আসল তারিখ ও শুভ মুহূর্ত প্রকাশ!

হোলি ২০২৫: ১৪ না ১৫ মার্চ? আসল তারিখ ও শুভ মুহূর্ত প্রকাশ!

হোলির নাম শুনলেই রঙের ছটা ও আনন্দের ঢেউ মনে জাগে। এই উৎসব প্রতি বছর আমাদের হৃদয়কে উচ্ছ্বাস ও আনন্দে ভরিয়ে তোলে। কিন্তু এইবার হোলি ২০২৫-এর তারিখ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

কেউ বলছে হোলি ১৪ মার্চ, আবার কেউ বলছে ১৫ মার্চ। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে শুরু হওয়া এই উৎসব দুই দিন ধরে পালিত হয়—প্রথম দিনে হয় হোলিকা দহন, আর পরের দিন রঙের হোলি। এবছরও প্রশ্ন উঠছে, প্রকৃত তারিখ কোনটি? আসুন, এই দ্বিধা দূর করি এবং হোলির শুভ মুহূর্ত সম্পর্কে জানি।

হোলিকা দহনের সঠিক তারিখ

হিন্দু পঞ্চাং অনুযায়ী, হোলিকা দহন সবসময় ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে প্রদোষ কালে করা হয়। ২০২৫ সালে এই তিথি ১৩ মার্চ সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে শুরু হবে এবং ১৪ মার্চ দুপুর ১২টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। অর্থাৎ, হোলিকা দহন ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় করা হবে। এই বিশেষ মুহূর্তে কাঠ ও অন্যান্য উপকরণ জ্বালিয়ে মানুষ অসৎ শক্তির ওপর সত্য ও শুভ শক্তির বিজয় উদযাপন করে। এই দিনটিকে “ছোট হোলি” বলা হয়, যা পরদিনের রঙের হোলির জন্য পরিবেশ তৈরি করে। তাই, যদি ভাবছেন হোলিকা দহন কবে, তাহলে ১৩ মার্চ প্রস্তুত থাকুন।

রঙের হোলি কবে উদযাপিত হবে?

হোলিকা দহনের পরের দিন রঙের হোলি বা “ধুলেন্দি” পালন করা হয়। পঞ্চাং অনুসারে, এটি চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদা তিথিতে উদযাপিত হয়। এবছর পূর্ণিমা তিথি ১৪ মার্চ দুপুর পর্যন্ত থাকবে, এরপর প্রতিপদা শুরু হবে। তাই রঙের হোলি ১৪ মার্চ পালিত হবে। এই দিনে মানুষ একে অপরকে রঙ ও আবির মেখে আনন্দ ভাগ করে নেয়। শিশুরা রঙিন পিচকারি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে, চারদিকে হাসি-ঠাট্টার পরিবেশ তৈরি হয়। তাই, ১৪ মার্চের জন্য রঙ ও মিষ্টি প্রস্তুত রাখুন, কারণ এটাই হোলির আসল দিন।

শুভ মুহূর্তের গুরুত্ব

হোলি শুধু রঙের উৎসব নয়, এটি শুভতারও প্রতীক। হোলিকা দহনের শুভ মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবছর ১৩ মার্চ রাত ১১টা ২৬ মিনিট থেকে ১৪ মার্চ রাত ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত হোলিকা দহনের জন্য সর্বোত্তম সময় বলে মনে করা হচ্ছে। এই সময়ে “ভদ্রা”র কোনো প্রভাব থাকবে না, যা এটি আরও শুভ করে তুলবে। “ভদ্রা” এক অশুভ সময় বলে ধরা হয় এবং এটি শেষ হওয়ার পরই হোলিকা দহন করা উচিত। এই মুহূর্ত শুধুমাত্র পূজার জন্য নয়, বরং ঘরে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

হোলির কাহিনি ও ঐতিহ্য

হোলি শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক কাহিনির প্রতীক। এটি ভক্ত প্রহ্লাদ ও হোলিকার কাহিনির সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ভগবান বিষ্ণু তার ভক্ত প্রহ্লাদকে হোলিকার আগুন থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই হোলিকা দহন সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ের প্রতীক। এছাড়া, হোলি রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের স্মৃতিও বহন করে। বলা হয়, কৃষ্ণ রাধাকে রঙ মেখে এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন। এই দিনে মানুষ পুরনো মনোমালিন্য ভুলে একে অপরকে আলিঙ্গন করে এবং নতুন সম্পর্কের সূচনা করে। এই ঐতিহ্য আমাদের ভালোবাসা ও ঐক্যের বার্তা দেয়।

প্রস্তুতি ও উদ্দীপনার পরিবেশ

হোলির জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। দিন যত এগিয়ে আসে, ঘরে ঘরে মিষ্টি তৈরি হয়, বাজার রঙ ও পিচকারিতে ভরে ওঠে। সবাই বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে তোলার পরিকল্পনা করে। শিশুরা তো আগেভাগেই জলভর্তি বেলুন ও রঙ সংগ্রহ করতে শুরু করে। এই উৎসব শুধু আনন্দই দেয় না, বরং সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধও বৃদ্ধি করে। তাই, এবছর ১৪ মার্চ হোলির রঙে রঙিন হতে প্রস্তুত থাকুন।

সমাজে হোলির প্রভাব

হোলির আনন্দ শুধু বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি পুরো সমাজকে একসঙ্গে যুক্ত করে। এই দিনে মানুষ জাতি, ধর্ম ও বয়সের ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে উৎসব পালন করে। গলিতে ঢোল-নগাড়ার শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়, এবং প্রত্যেকের মুখ উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে। এই উৎসব আমাদের শেখায় যে জীবন আনন্দে ভরপুর হওয়া উচিত এবং ছোটখাটো মনোমালিন্য দূরে সরিয়ে ফেলা উচিত। ২০২৫ সালের হোলিও একইভাবে আমাদের একত্রিত করবে, যখন আমরা সবাই মিলে এই সুন্দর উৎসব উদযাপন করব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *