ভারতের শীর্ষ আট আইটি কো ম্পা নির শেয়ারে মন্দার প্রভাব

ভারতের অর্থনীতির গর্ব হিসেবে বিবেচিত আইটি সেক্টর বর্তমানে সংকটের মুখোমুখি। গত কয়েক মাসে দেশের প্রধান আইটি কো ম্পা নিগুলোর শেয়ারের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এর পেছনে প্রধান কারণগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা, বাণিজ্য যুদ্ধ, এবং দুর্বল রাজস্ব বৃদ্ধি। এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ ১০ আইটি কো ম্পা নি প্রায় ৮৮,০০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। নিফটি আইটি ইনডেক্সও মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ভারতের বৃহত্তম সফটওয়্যার সেবা রপ্তানিকারক টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS)-এর শেয়ার প্রায় ২৩% হ্রাস পেয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ৩.৭ লাখ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শীর্ষ ১০ আইটি কো ম্পা নির মধ্যে আটটি মন্দার কবলে পড়েছে, যার মধ্যে ইনফোসিস (Infosys), এইচসিএল টেক (HCL Tech) এবং টেক মাহিন্দ্রা (Tech Mahindra) অন্তর্ভুক্ত। এলটিআইমাইন্ডট্রি (LTIMindtree) সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে, যার শেয়ার ৩৩% হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, উইপ্রো (Wipro) তুলনামূলকভাবে ভালো পারফর্ম করেছে, তবে তার শেয়ারও ১৬% কমেছে।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকের ফলাফল কিছুটা স্বস্তি দিলেও, পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। বাড়তে থাকা বাণিজ্য যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমাতে বিলম্ব, এবং মন্দার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসকে নাড়া দিয়েছে। উল্লেখ্য, যেসব কো ম্পা নির শেয়ার তাদের পূর্ববর্তী উচ্চতা থেকে ২০% বা তার বেশি হ্রাস পায়, সেগুলো সাধারণত মন্দার শেয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার ঝুঁকি
যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার ঝুঁকি বৈশ্বিক বাজারের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বারা আরোপিত শুল্ক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক এবং শুল্ক সম্পর্কিত ঝুঁকি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় উদ্যোগের স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে, যার প্রভাব ভারতের আইটি সেক্টরেও পড়তে পারে। জে.পি. মরগ্যানের প্রধান অর্থনীতিবিদ এই বছর যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার সম্ভাবনা ৪০% হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের শাসনের প্রতি বিশ্বাসের অভাব দেশের বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে চিত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে গোল্ডম্যান স্যাক্স এবং মরগ্যান স্ট্যানলির অর্থনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস যথাক্রমে ১.৭% এবং ১.৫% পর্যন্ত কমিয়েছেন।
দুর্বল রাজস্ব বৃদ্ধি
গ্লোবাল ব্রোকারেজ ফার্ম মরগ্যান স্ট্যানলি ভারতের বড় আইটি কো ম্পা নিগুলোর জন্য মার্কিন ডলার রাজস্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাস ১০০-২০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। ফার্মের মতে, FY26-এ বৃদ্ধির হার ৪.৫% এবং FY27-এ ৬% থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের শুল্ক সম্পর্কিত অবস্থান এবং চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে গ্রাহকরা ‘ওয়েট-অ্যান্ড-ওয়াচ’ কৌশল গ্রহণ করছেন, যা আইটি ব্যয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটাতে পারে।
এআই-এর ঝুঁকিও বিদ্যমান
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর দ্রুত বৃদ্ধি আইটি সেবা শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। জেনারেটিভ এআই (জেনএআই)-এর গ্রহণ নতুন কো ম্পা নিগুলোর জন্য সুবিধা আনতে পারে, যেখানে পুরনো কো ম্পা নিগুলোকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হতে পারে। এআই-এর মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্য কো ম্পা নিগুলোর জন্য অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে, তবে এর ফলে আইটি সেবা কো ম্পা নিগুলোর রাজস্ব হ্রাস পেতে পারে।
মূল্যায়ন সম্পর্কিত উদ্বেগ
সাম্প্রতিক সংশোধন সত্ত্বেও, নিফটি আইটি-এর P/E রেশিও (প্রাইস টু আর্নিংস রেশিও) নিফটির P/E-এর তুলনায় এখনও উচ্চতর। মোতিলাল ওসওয়ালের মতে, নিফটি আইটি-এর বর্তমান প্রিমিয়াম ৩৭%, যা কোভিড-১৯-এর সময় দেখা শীর্ষ মূল্যায়নের চেয়েও বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, আইটি কো ম্পা নিগুলোর মূল্যায়নে আরও পতনের সম্ভাবনা রয়েছে।
P/E রেশিও একটি কো ম্পা নির শেয়ারের মূল্য এবং তার প্রতি শেয়ার আয় (EPS)-এর অনুপাত। এটি বিনিয়োগকারীদের বলে যে, কো ম্পা নির আয়ের তুলনায় শেয়ার কতটা মূল্যবান। P/E রেশিও বিনিয়োগকারীদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কোনো শেয়ার ওভারপ্রাইসড বা আন্ডারপ্রাইসড, যা তাদের বিনিয়োগ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।