বেলুচিস্তানে ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলা: যাত্রীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা​

বেলুচিস্তানে ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলা: যাত্রীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা​

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ১১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার যাত্রী মুশতাক মুহাম্মদ সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, “এমন ভয়াবহ দৃশ্য আমি কখনো ভুলতে পারব না।” বিবিসি উর্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুশতাক ট্রেনের তিন নম্বর বগিতে ছিলেন। তিনি জানান, “হামলার শুরুতে একটি বড় বিস্ফোরণ হয়। এরপর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গুলিবর্ষণ চলতে থাকে।” আরেক যাত্রী ইশাক নূর, যিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডি যাচ্ছিলেন, বলেন, “বিস্ফোরণ এতটাই তীব্র ছিল যে ট্রেনের জানালা ও দরজা কেঁপে ওঠে, আমার পাশে বসা সন্তানটি নিচে পড়ে যায়।” তিনি আরও জানান, “গুলিবর্ষণ প্রায় ৫০ মিনিট ধরে চলে। আমরা শ্বাস নিতে পারছিলাম না, জানতাম না আমাদের ভাগ্যে কী রয়েছে।”​

মুশতাক বলেন, গুলিবর্ষণ ধীরে ধীরে থেমে গেলে অস্ত্রধারীরা ট্রেনের বগিগুলোতে প্রবেশ করে। ইশাক নূর জানান, “তারা কিছু যাত্রীর পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আলাদা করে। তিনজন সন্ত্রাসী আমাদের বগির দরজায় পাহারা দিচ্ছিল। তারা বলছিল, সাধারণ নাগরিক, মহিলা, বৃদ্ধ ও বেলুচ লোকদের কিছু করবে না।” মুশতাক আরও জানান, হামলাকারীরা নিজেদের মধ্যে বেলুচ ভাষায় কথা বলছিল এবং তাদের নেতা বারবার বলছিলেন, নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর বিশেষ নজর রাখতে এবং তারা যেন পালাতে না পারে। ইশাক বলেন, “আমার মনে হয়, তারা আমাদের বগি থেকে কমপক্ষে ১১ জন যাত্রীকে নামিয়ে নিয়ে যায় এবং বলে তারা নিরাপত্তাকর্মী। একজন ব্যক্তি প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে তাকে নির্যাতন করা হয় এবং এরপর গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর বগিতে থাকা সবাই তাদের নির্দেশ মেনে চলে।” তিনি আরও জানান, “তারা আমাকে যেতে দিচ্ছিল না, কিন্তু যখন আমি তাদের বললাম আমি তুরবাত (বেলুচিস্তান) এর বাসিন্দা এবং আমার সঙ্গে শিশু ও মহিলা রয়েছে, তখন তারা আমাকে যেতে দেয়।” অন্য এক যাত্রী মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, সন্ত্রাসীরা বৃদ্ধ, সাধারণ নাগরিক, মহিলা ও শিশুদের যেতে দেয়। তিনি বলেন, “যাত্রীরা খুবই ভীত ছিল, এটি কেয়ামতের দিনের মতো ভয়াবহ দৃশ্য ছিল।” আশরাফের অনুমান অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা প্রায় ২৫০ জনকে নিয়ে যায় এবং হামলাকারীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১,১০০।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *