উন্নাওয়ে এক মুসলিম যুবকের মৃত্যুতে পরিবারের বেদনা, বললেন- “চোয়াল বের করে দেওয়া হয়েছে… জোর করে রঙ লাগানো হয়েছে এবং মৃত্যু পর্যন্ত পিটিয়ে মারা হয়েছে”

উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলায় সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে এক মুসলিম যুবকের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। কোতোয়ালি সদর থানা এলাকায় হোলির দিন এই ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম শরীফ (৫৫), যিনি হোলিতে মুদিখানা কিনতে যাচ্ছিলেন এবং পথেই মারা যান।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, যুবকের উপর জোর করে রঙ ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং পরে তাকে মারধর করা হয়েছিল, যার ফলে তার মৃত্যু হয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় কিছু যুবকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে যে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে যে মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হয়েছে এবং শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে। মৃতের বড় মেয়ে জানিয়েছেন, আমার বাবা কিছু জিনিসপত্র আনতে গিয়েছিলেন এবং জোর করে তাঁর উপর রঙ ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয় যতক্ষণ না সে মারা যায়। আমরা ন্যায়বিচার চাই এবং যারা এটা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। মৃতের বড় বোন আরও বলেন, আমাদের ভাইয়ের উপর জোর করে রঙ লাগানো হয়েছিল কেন? সে উপবাস করছিল এবং তারপর তাকে মারধর করা হয়েছিল, যা খুবই অন্যায় ছিল। আমাদের ঘরে তিন মেয়ে আছে, আমরা জানি না এখন বাড়ির কী হবে। সবাই মিলে তাকে মেরে ফেলল।
প্রতিবেশীরা কী বলছে জানেন? মৃতের প্রতিবেশী সমীর বলেন যে সরকারের উচিত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। এটা ভয়াবহভাবে ভুল হয়ে গেছে। আমরা যখন তাদের রঙ নষ্ট করিনি, তাহলে তারা কেন এমন করল? তার সাথে কোন ঝগড়া হয়নি। সে তার উপবাস রেখেছিল এবং কিছু গৃহস্থালীর জিনিসপত্র আনতে গিয়েছিল, এবং তারপর তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য: প্রত্যক্ষদর্শী শামীম বলেন, আমি মাংস কিনতে গিয়েছিলাম এবং দেখতে পাই যে কিছু লোক যুবকের গায়ে রঙ লাগাচ্ছে। আমি প্রত্যাখ্যান করে ঝগড়া শান্ত করলাম। তারপর যুবকটি ই-রিকশায় বসে সামনে এগিয়ে যায়, কিন্তু সেখানেও তাকে আবার মারধর করা হয়। যারা রঙ ছুঁড়েছিল তারা তাকে তাড়া করছিল। প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমি যখন সেখানে পৌঁছাই, তখন যুবকটিকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। এরপর তিনি মারা যান। তাকে এতটাই ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল এবং এতটা হয়রানি করা হয়েছিল যে তার চোয়াল বেরিয়ে এসেছিল। তার সারা শরীরে রঙ লেগে ছিল, এমনকি তার হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
মৃত ব্যক্তিকে জল খাওয়ানো ব্যক্তি কী বলে জানেন? ঘটনাস্থলে মৃত ব্যক্তিকে জল খাওয়ানো রমেশ প্রধান বলেন, আমরা তাকে জল দিয়েছিলাম এবং তারপর তার আত্মীয়রা তাকে নিয়ে যায়। এর পর তিনি মারা যান।
অভিযুক্ত পক্ষের বক্তব্য: উন্নাওয়ে যে বাড়িতে রঙ ছড়ানো হয়েছিল, সেই বাড়ির মহিলা রাজকুমারী এবং মঞ্জু জানিয়েছেন যে শিশুরা রঙ ছড়িয়েছে, কিন্তু তারা খুন করেনি। তিনি বলেন, রঙ লাগানোর পর যুবকরা গালিগালাজ এবং বাজে কথা বলতে শুরু করে। তারপর সে একটি ই-রিকশায় বসে সামনে এগিয়ে গেল এবং সেখানেই মারা গেল।
মামলার পুলিশ তদন্ত চলছে। উন্নাওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অখিলেশ সিং জানিয়েছেন যে, মৃত ব্যক্তির মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অন্যান্য বিষয়গুলি তদন্ত করা হচ্ছে। এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। হোলির রঙ ছিটিয়ে দেওয়ার একটি রিপোর্ট এসেছে এবং আমরা এটি তদন্ত করছি। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে সকল দিক মাথায় রেখে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।