ক্যান্সার রোগীদের ওপর ৭৩% কার্যকর এই চিকিৎসা, রিপোর্ট প্রকাশিত

ক্যান্সার রোগীদের ওপর ৭৩% কার্যকর এই চিকিৎসা, রিপোর্ট প্রকাশিত

ভারতে ক্যান্সার রোগের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (NIH) অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারতে ১৪ লাখ ৬১ হাজারের বেশি ক্যান্সারের কেস পাওয়া গিয়েছে। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভারতে CAR T-Cell Therapy চালু করা হয়েছে।

এটি নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, যা দেখাচ্ছে যে ভারতে এই থেরাপির প্রভাব কেমন হয়েছে। তবে এটি জানার আগে বোঝা জরুরি যে এই থেরাপি কী এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এটি কীভাবে সাহায্য করে।

CAR T-Cell Therapy কী?

CAR T-Cell Therapy বা Chimeric Antigen Receptor T-Cell Therapy হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যা শরীরের ইমিউন কোষগুলোকে প্রশিক্ষিত করে, যাতে তারা নিজেরাই ক্যান্সার কোষ চিহ্নিত করতে ও ধ্বংস করতে পারে। এই পদ্ধতিটি নির্দিষ্ট ধরনের রক্ত ক্যান্সারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। সাধারণত এই থেরাপি সেই রোগীদের দেওয়া হয়, যাদের ক্যান্সার আবার ফিরে আসে অথবা প্রথম ধাপের চিকিৎসায় ক্যান্সার শনাক্ত হয় না।


রিপোর্ট প্রকাশিত

ল্যানসেট রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের প্রথম CAR T-Cell Therapy-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলে দেখা গেছে, এই চিকিৎসা প্রায় ৭৩% রোগীর ওপর প্রভাব ফেলেছে। রিপোর্টে এটিকে বিশ্বমানের একটি উদ্ভাবন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতের ঔষধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (Drug Regulator) ২০২৩ সালে এই থেরাপির অনুমোদন দেয়। বর্তমানে এটি অ্যাপোলো, ফোর্টিস, অমৃতা এবং ম্যাক্স-এর মতো বিভিন্ন হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে।

ল্যানসেটের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭৩% সাড়া পাওয়ার হার সহ গবেষণায় বলা হয়েছে যে তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে গড় ৬ মাস এবং লিম্ফোমা রোগীদের ক্ষেত্রে ৪ মাস পর্যন্ত উন্নতি দেখা গেছে।


থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী?

যদিও এই থেরাপি ইতিবাচক ফলাফল দিচ্ছে, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই থেরাপির ফলে Haemophagocytic Lymphohistiocytosis (HLH) রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের ইমিউন কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়ে যায়, যার ফলে চরম প্রদাহ (hyper inflammation) এবং অঙ্গ বিকল (organ damage) হতে পারে।

এই সমস্যা গবেষণায় অংশ নেওয়া ১২% রোগীর মধ্যে দেখা গেছে, যার কারণে অন্তত একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, গবেষণায় ফুসফুসে রক্তক্ষরণ এবং একাধিক অঙ্গ বিকল (multi-organ failure) জনিত আরও একটি মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, থেরাপির সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে:

  • ৬১% রোগীর মধ্যে অ্যানিমিয়া (রক্তস্বল্পতা)
  • ৬৫% রোগীর মধ্যে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (কম প্লেটলেট, ফলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি)
  • ৯৬% রোগীর মধ্যে নিউট্রোপেনিয়া (সাদা রক্তকণিকার এক প্রকার নিউট্রোফিলের সংখ্যা হ্রাস)
  • ৪৭% রোগীর মধ্যে ফেব্রাইল নিউট্রোপেনিয়া (জ্বরসহ নিউট্রোপেনিয়া)

এগুলি এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, যাদের ওপর অন্যান্য চিকিৎসা কাজ করছিল না।


থেরাপি কীভাবে কাজ করে?

CAR T-Cell Therapy-তে প্রথমে রোগীর শরীর থেকে টি-সেল (T-Cell) সংগ্রহ করা হয়। এরপর ল্যাবে এই কোষগুলোতে এমন রিসেপ্টর (receptor) যোগ করা হয়, যা ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করে। এরপর এই কোষগুলিকে বহু গুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং তা রোগীর শরীরে পুনরায় প্রবেশ করানো হয়।

ভারতে তৈরি এই চিকিৎসা মূলত দুই ধরনের রক্ত ক্যান্সারের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা B-Cell-কে প্রভাবিত করে—

  1. তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (Acute Lymphoblastic Leukemia – ALL)
  2. বৃহৎ বি-সেল লিম্ফোমা (Large B-Cell Lymphoma – LBCL)

কেন এই চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ?

প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও ব্যয়ের কারণে, CAR T-Cell Therapy-এর মতো উন্নতমানের ক্যান্সার চিকিৎসা শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট দেশে সীমাবদ্ধ। এই চিকিৎসা বর্তমানে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ইসরায়েল, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও চীনে পাওয়া যায়।

তবে, এই চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ভারতে এর খরচ প্রায় ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *