5 বেডরুমের সমান আকার, 4.5 লাখ কিলো ওজন—কেমন ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন যেখানে 9 মাস ধরে আটকে আছেন সুনীতা উইলিয়ামস

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ISS) হল সেই মহাকাশে থাকা প্ল্যাটফর্ম যেখানে মহাকাশচারীরা অবস্থান করেন, গবেষণা চালান এবং বড় বড় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করেন। কিন্তু পৃথিবী থেকে দেখা ISS-এর জীবনধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আপনি জেনে অবাক হতে পারেন যে ISS-এ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ বার সূর্যোদয় এবং ১৬ বার সূর্যাস্ত হয়। এটি কেন ঘটে, তা আমরা পরে ব্যাখ্যা করব। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এই ISS-এ ৯ মাস ধরে আটকে আছেন এবং পৃথিবীতে ফেরার অপেক্ষা করছেন।
ISS কি স্থায়ী কোনো কাঠামো?
অনেকে মনে করতে পারেন যে ISS হল নয়াদিল্লি রেলস্টেশন বা দিল্লি এয়ারপোর্টের মতো একটি স্থায়ী কাঠামো। কিন্তু এটি একেবারেই সঠিক নয়। ISS কোনো স্থির স্ট্রাকচার নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ মহাকাশযান, যা পৃথিবীর চারদিকে ক্রমাগত ঘুরতে থাকে।
পৃথিবী থেকে ISS-এর দূরত্ব কত?
ISS পৃথিবী থেকে ৪০৩ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে এবং ক্রমাগত পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। এতে মহাকাশচারীরা উপস্থিত থাকেন, যার মানে হল সুনীতা উইলিয়ামস গত ৯ মাস ধরে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছেন!
ISS-এর গতিবেগ কত?
ISS-এর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল এর গতিবেগ। এটি ১৭,৫০০ মাইল (প্রায় ২৮,১৬৩ কিলোমিটার) প্রতি ঘণ্টার গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
ISS-এর আকার কেমন?
NASA-এর মতে, ISS-এর আকার পাঁচটি বেডরুমের একটি বড় বাড়ির সমান বা দুটি বোয়িং ৭৪৭ বিমানের সমান। এটি ৬ জন মহাকাশচারী এবং কিছু অতিথিকে ধারণ করতে পারে। বর্তমানে স্পেস স্টেশনে ৮ জন সদস্য রয়েছেন।
ISS-এর ওজন প্রায় ১০ লাখ পাউন্ড (৪৫৩,৫৯২.৩৭ কেজি)। যদি এর সমস্ত অংশকে একত্রিত করে মাপা হয়, তবে এর দৈর্ঘ্য একটি ফুটবল মাঠের সমান হবে।
এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান এবং ইউরোপের পরীক্ষাগার মডিউল যুক্ত রয়েছে।
ISS-এ দিনে ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত কেন হয়?
ISS-এ ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার সূর্যোদয় এবং ১৬ বার সূর্যাস্ত হয়। এটি সম্ভব হয় কারণ ISS প্রতি ৯০ মিনিটে পৃথিবীর চারপাশে একবার ঘোরে।
এর অর্থ, ৪৫ মিনিট সূর্যের আলো এবং পরবর্তী ৪৫ মিনিট অন্ধকারে কাটায়। তাই প্রতিবার এটি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করে।
পৃথিবীর আকার (১২,৭৪২ কিমি ব্যাস) এবং ISS-এর উচ্চতা (৪০০ কিমি) এমনভাবে সামঞ্জস্য করা হয়েছে যে এটি প্রতি ৯০ মিনিটে পৃথিবীর দিনের এবং রাতের অংশ অতিক্রম করে।
ISS কত পুরোনো?
ISS-এর প্রথম অংশ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে লঞ্চ করা হয়েছিল। এটি একটি রাশিয়ান রকেটের মাধ্যমে জারিয়া (Zarya) কন্ট্রোল মডিউল মহাকাশে পাঠানো হয়।
প্রায় দুই সপ্তাহ পরে, স্পেস শাটল এন্ডেভার এবং জারিয়ার সংযোগ ঘটে। এর পর পরবর্তী দুই বছরে আরও অংশ যুক্ত করা হয় এবং ২০০০ সালের ২ নভেম্বর প্রথমবারের মতো ক্রু ISS-এ প্রবেশ করেন।
NASA এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদাররা ২০১১ সালে ISS-এর নির্মাণ সম্পূর্ণ করে।
সুনীতা উইলিয়ামসের ফেরার তারিখ নিশ্চিত
এদিকে, সুনীতা উইলিয়ামসের ফেরার বিষয়ে একটি সুখবর এসেছে।
NASA নিশ্চিত করেছে যে তাঁর পৃথিবীতে ফেরার সম্ভাব্য সময়সূচি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫:৫৭ (ভারতীয় সময় অনুযায়ী বুধবার সকাল ৩:২৭)।
সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর গত জুন মাস থেকে ISS-এ আটকে আছেন, কারণ তাঁদের বোয়িং স্টারলাইনারে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে এটি পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
NASA এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে, এবং আশা করা হচ্ছে যে তাঁরা শীঘ্রই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।