জাতির সুরক্ষার জন্য মাংস… প্রেমানন্দ মহারাজ সেনার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে এমন কী বললেন যে শুরু হলো বিতর্ক?

জাতির সুরক্ষার জন্য মাংস… প্রেমানন্দ মহারাজ সেনার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে এমন কী বললেন যে শুরু হলো বিতর্ক?

বৃন্দাবনের পরম পূজ্য প্রেমানন্দ মহারাজের ধর্মসঙ্গত সহজ ভাষণ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশেষ ব্যক্তিদের মন ছুঁয়ে যায়। প্রেমানন্দ মহারাজের ওজস্বী বাক্যে কোনো ঐতিহ্যগত ধর্মীয় রূঢ়বাদ বা কঠোরতা নেই।

তিনি সর্বদা ধর্মসঙ্গত কর্তব্যের কথা বলেন, যা মানুষের বাস্তব জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রেমানন্দ মহারাজের আশ্রমে অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি আসেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। একবার, সেনার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জটিল একটি প্রশ্ন করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি নিজে সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী। তবে সেনাবাহিনীর জন্য আমিষ খাদ্যের অনুমতি দেওয়ার জন্য তাঁকে সরকারি নথিতে স্বাক্ষর করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে তিনি এই পাপ থেকে কীভাবে রক্ষা পাবেন? প্রেমানন্দ মহারাজ এই প্রশ্নের এমন উত্তর দিলেন যা ওই কর্মকর্তা কল্পনাও করেননি।

বিধানের অনুসরণ করা আপনার কর্তব্য

প্রেমানন্দ মহারাজ বললেন, “আপনি সেনার সরকারি বিভাগে কাজ করেন। এখানে আপনি নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নন। নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে এটিকে পাপ হিসেবে দেখার সিদ্ধান্তও আপনি নিতে পারেন না। এখানে পাপ দেখার প্রশ্ন নয়, বরং কর্তব্য দেখার বিষয়। ধরুন, একজন সন্ত্রাসবাদী সীমান্ত পার হয়ে আসছে, তখন আপনি কি ভাববেন যে তাকে হত্যা করলে পাপ হবে? না, বরং আপনি তাকে গুলি করে হত্যা করবেন, এতে আপনার পাপ হবে না, কারণ আপনি দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন। এটিই আপনার কর্তব্য। সুতরাং, আপনি যদি সরকারি দপ্তরে কাজ করেন, তবে আপনাকে বিধি অনুসরণ করতেই হবে।”

সরকারি নথিতে স্বাক্ষর করতেই হবে

প্রেমানন্দ মহারাজ আরও বলেন, “আপনার মূল লক্ষ্য হল জাতির সেবা করা, খাদ্য নিয়ে চিন্তা করা নয়। যুদ্ধের সময় যা কিছু প্রাপ্ত হয়, জীবনধারণের জন্য সেটি গ্রহণ করতে হয়। সরকার যা সরবরাহ করে, সেটাই গ্রহণ করা উচিত। এ নিয়ে কোনো ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন নেই। শত্রুর ওপর গুলি চালিয়ে আপনাকে দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সাধারণ ব্যক্তি নই, আমরা রাষ্ট্ররক্ষার দায়িত্বে থাকা সৈনিক। এখানে ধর্মের সংজ্ঞা পরিবর্তিত হয়। মানুষের অবস্থান, যোগ্যতা, পদমর্যাদা এবং দায়িত্ব অনুযায়ী ধর্মের রূপও বদলায়। এই পরিস্থিতিতে আপনার ধর্ম হল সরকারি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা।”

মাংস পরিবেশন করতেও হতে পারে

প্রেমানন্দ মহারাজ বলেন, “সেনা বিভাগ কঠোর শৃঙ্খলাবদ্ধ একটি সংস্থা, যার প্রধান দায়িত্ব জাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সৈন্যদের শক্তিশালী রাখতে বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন খাদ্য ব্যবস্থা থাকে। কেউ রাজসিক খাবার খান, কেউ তামসিক খাবার গ্রহণ করেন। যারা সাত্ত্বিক, তারা না খেলেও চলে। কিন্তু যারা রাজসিক বা তামসিক প্রকৃতির, তারা খেতেই থাকবেন। এটি বিধিসম্মত। যদি বলা হয় যে সমগ্র ভারতবর্ষ নিরামিষভোজী হয়ে যাবে, তবে কি তা সম্ভব? তা কখনওই সম্ভব নয়। যারা মাংস খান, তারা ঈশ্বরের কথাও শোনেন না, আমাদের কথাও শুনবেন না। যারা তামসিক প্রকৃতির, তারা এমনটাই করবেন। তবে যারা সাত্ত্বিক, তাদের ওপর আমাদের প্রভাব থাকবে।

আপনি বলছেন যে আপনি সাত্ত্বিক চিন্তাধারার মানুষ, এটি ভালো কথা। কিন্তু সেনাবাহিনীতে যারা তামসিক বা রাজসিক চিন্তাভাবনার, তাদের জন্য আপনাকে ব্যবস্থা করতেই হবে। সেজন্য আপনাকে সেনার নিয়ম অনুযায়ী স্বাক্ষর করতে হবে। এতে আপনার পাপ হবে না, কারণ আপনি নিজে পশুহত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন না, আপনি নিজে মাংসও খাচ্ছেন না। কিন্তু যেখানে এই কাজ হচ্ছে, সেখানে আপনাকে সরকারি বিধি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আপনি যদি একজন কর্মকর্তা হন, তাহলে প্রয়োজনে আপনাকে মাংস পরিবেশনও করতে হতে পারে। কারণ এটি আপনার দায়িত্বের অংশ। এতে পাপ হবে না, কারণ আপনি নিজে হিংসার আদেশ দিচ্ছেন না। এটি সরকারি কাজ, এবং আপনি এর সঙ্গে যুক্ত। তাই আপনাকে এটি করতেই হবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *