“ঔরঙ্গজেব ছিলেন কট্টর ও নিষ্ঠুর, কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে তিনি শান্তির জন্য ছটফট করছিলেন”

“ঔরঙ্গজেব ছিলেন কট্টর ও নিষ্ঠুর, কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে তিনি শান্তির জন্য ছটফট করছিলেন”

ঔরঙ্গজেবকে নিয়ে সারা দেশে আলোচনা চলছে, বিশেষ করে তার নিষ্ঠুরতার প্রসঙ্গ উঠে আসছে। ঔরঙ্গজেবকে মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ শক্তিশালী সম্রাট বলা হয়, কারণ তার পর থেকেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।

ঔরঙ্গজেবের একজন আধ্যাত্মিক গুরুও ছিলেন। এই গুরু কে ছিলেন এবং কেন ঔরঙ্গজেব তার শেষ ইচ্ছায় তাদের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তা জানা যাক—

সম্রাট শাহজাহান ও মুমতাজ মহলের পুত্র ঔরঙ্গজেব সিংহাসনের জন্য তার ভাইদের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। ১৬৫৮ সালে তিনি নিজের বাবাকে বন্দি করে নিজেই মুঘল সম্রাট হয়ে ওঠেন। প্রায় ৫০ বছর তিনি শাসন করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটান। তবে তার কঠোর ধর্মীয় নীতি ও লাগাতার যুদ্ধের কারণে তার সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।

এই সুফি সাধক ছিলেন ঔরঙ্গজেবের আধ্যাত্মিক গুরু

ঔরঙ্গজেব কঠোরভাবে ইসলামী আইন মেনে চলতেন। তিনি পুনরায় জিজিয়া কর আরোপ করেন এবং বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করান। এছাড়াও, তিনি রাজদরবারে সংগীত ও শিল্পকলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তার নীতিগুলোর কারণে হিন্দু, শিখ, রাজপুত ও মারাঠা শাসকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে, যার ফলে বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ধর্মের প্রতি তার নিষ্ঠা গভীর ছিল এবং তিনি তার আধ্যাত্মিক গুরুর প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। সুফি সাধক সৈয়দ জাইনুদ্দিন দাউদ শিরাজি ছিলেন ঔরঙ্গজেবের আধ্যাত্মিক গুরু।

আধ্যাত্মিক অনুশোচনা

ঔরঙ্গজেবের শাসনকাল কঠোর ধর্মীয় নীতিতে পরিচালিত ছিল, তবে জীবনের শেষ সময়ে তিনি তার সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে পুনর্বিবেচনা করেন। তার উইল থেকে বোঝা যায় যে তিনি নিজের আত্মার শান্তি খুঁজছিলেন।

মৃত্যুর পরের প্রস্তুতি

ইসলামে আধ্যাত্মিক গুরুর গুরুত্ব অপরিসীম। নিজের উইলে তিনি গুরুর উল্লেখ করেছিলেন, যাতে বোঝানো যায় যে তিনি তার আত্মার পরিশুদ্ধি এবং অন্তিম সংস্কারের ইচ্ছা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।

সুফি সাধকদের প্রভাব

ঔরঙ্গজেবকে এক কঠোর সম্রাট হিসেবে দেখা হলেও তিনি সুফি সাধকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তার উইলে গুরুর উল্লেখ প্রমাণ করে যে জীবনের শেষ সময়ে তিনি আভ্যন্তরীণ শান্তি খুঁজছিলেন।

ঔরঙ্গজেবের উইল থেকে এটা স্পষ্ট যে তার জীবন শুধু শাসন ও যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং শেষ মুহূর্তে তিনি আত্মিক মুক্তি ও আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন। তার গুরুর উল্লেখ প্রমাণ করে যে মৃত্যুর আগে তিনি কোনো না কোনোভাবে আত্মশুদ্ধি ও শান্তি খুঁজছিলেন। ইতিহাসের এই বিতর্কিত সম্রাটের এই দিকটি আমাদের এক ভিন্ন চিত্রের সঙ্গে পরিচয় করায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *