রোজা : 14 ঘণ্টা না খাওয়ার বিজ্ঞান, শরীরের জন্য উপকারিতা!

রমজানের পবিত্র মাস চলছে, এবং এই সময়ে যারা রোজা (Roza) রাখেন, তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে ও না পান করে থাকেন। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, ১৪ ঘণ্টা না খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে কী পরিবর্তন আসে?
কিছু মানুষ বলেন, এর ফলে শরীরে এক ধরনের ‘অমৃত’ তৈরি হয়, যা আমাদের সুস্থ রাখে। আসুন, এই বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান (science) বুঝে নিই এবং জানি, রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর কী প্রভাব পড়ে। এই তথ্য কেবল রোজা পালনকারীদের জন্যই নয়, বরং প্রত্যেক সেই ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা তাদের স্বাস্থ্যের (health) প্রতি সচেতন।
১৪ ঘণ্টা না খাওয়ার পর শরীর কীভাবে কাজ করে?
যখন আমরা ১৪ ঘণ্টা কিছু খাই না, তখন শরীরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার ফলে শরীর তার শক্তির (energy) উৎস পরিবর্তন করে। সাধারণত আমরা যে খাবার খাই, তা থেকে প্রাপ্ত গ্লুকোজ (glucose) আমাদের শক্তি জোগায়। কিন্তু রোজার সময় যখন খাবার গ্রহণ বন্ধ থাকে, তখন শরীর প্রথমে যকৃতে (liver) জমা থাকা গ্লাইকোজেন (glycogen) ব্যবহার করে।
এরপর, শরীর চর্বি (fat) পোড়াতে শুরু করে, যা ‘কিটোসিস’ (ketosis) নামে পরিচিত। কিছু গবেষণা বলছে, কিটোসিস চলাকালীন শরীরে কিটোন (ketones) উৎপন্ন হয়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং প্রদাহ (inflammation) কমাতে সাহায্য করে। তাহলে কি এটিই সেই ‘অমৃত’, যার কথা অনেকে বলেন?
রোজার মানসিক উপকারিতা
রোজার প্রভাব কেবল শারীরিক নয়, বরং মানসিক (mental health) দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় না খাওয়ার ফলে শরীরে ‘অটোফ্যাগি’ (autophagy) নামক একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে শরীর পুরনো ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষ (cells) পরিষ্কার করে এবং নতুন কোষ তৈরির সুযোগ দেয়। বিজ্ঞানীরা এটিকে ‘শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার প্রক্রিয়া’ বলে থাকেন।
অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে, অটোফ্যাগি বয়স বৃদ্ধির গতি কমাতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রোজার সময় অনেক মানুষ বলেন যে তারা হালকা ও সতেজ অনুভব করেন। সম্ভবত এই কারণেই এটিকে ‘অমৃতের’ মতো মনে করা হয়।
সবাই কি রোজার উপকার পায়?
তবে এটি বোঝা জরুরি যে, সবার শরীরে রোজার প্রভাব একই রকম নাও হতে পারে। যারা সুস্থ (healthy) এবং সঠিকভাবে রোজা রাখেন, তারা এর উপকারিতা পেতে পারেন। কিন্তু যারা অসুস্থ বা পুষ্টিহীনতায় (nutrition deficiency) ভুগছেন, তাদের জন্য দীর্ঘ সময় না খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে।
ডাক্তারদের মতে, রোজা শুরু করার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। পাশাপাশি, ইফতার করার সময় হালকা ও পুষ্টিকর খাবার (nutritious food) গ্রহণ করা উচিত, যাতে শরীর হঠাৎ ধাক্কা না খায়। জলশূন্যতা (dehydration) এড়াতে ইফতার ও সেহরিতে প্রচুর জল পান করাও গুরুত্বপূর্ণ।
রোজার আত্মশৃঙ্খলা ও মানসিক প্রশান্তি
রোজার বিজ্ঞান শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ (self-discipline) ও ধৈর্য বাড়ায়। গবেষণা বলছে, রোজা রাখার ফলে মানসিক চাপ (stress) কমে এবং ঘুমের (sleep) গুণগত মান উন্নত হয়। অনেক মানুষ একে একটি আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা (spiritual experience) হিসেবে দেখেন, যা তাদের মনের প্রশান্তি দেয়।
তাহলে কি সত্যিই রোজা শরীরে কোনো ‘অমৃত’ তৈরি করে? বিজ্ঞানীরা সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর দেন না, তবে তারা একমত যে, সঠিকভাবে করা উপবাস (fasting) স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
সারসংক্ষেপ
১৪ ঘণ্টা না খাওয়ার ফলে শরীরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে, যদি এটি সঠিকভাবে করা হয়। এটি কেবল আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য (physical health) উন্নত করে না, বরং মানসিক শান্তি (mental peace) প্রদান করে। আপনি যদি রোজা রাখেন বা এর উপকারিতা জানতে চান, তাহলে নিজের শরীরের সংকেত বোঝার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
রোজার এই বিজ্ঞান আমাদের শেখায় যে, সঠিক উপায়ে উপবাস রাখলে এটি আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারে।