মোদী কেন পাকিস্তান নিয়ে হতাশ, চীন নিয়ে আশাবাদী এবং ট্রাম্পের ওপর বিশ্বাসী?

মোদী কেন পাকিস্তান নিয়ে হতাশ, চীন নিয়ে আশাবাদী এবং ট্রাম্পের ওপর বিশ্বাসী?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লেক্স ফ্রিডম্যানের পডকাস্টে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যেখানে তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন—এবং পাকিস্তান, চীন থেকে শুরু করে আমেরিকা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন।

স্বাভাবিকভাবেই, আমেরিকা সম্পর্কে আলোচনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষভাবে উল্লেখ এসেছে, আর ভারত-চীন সম্পর্কের প্রসঙ্গে শি জিনপিংয়ের কথা উঠেছে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্ক সম্পর্কিত অভিজ্ঞতাও মোদী ভাগ করে নিয়েছেন।

মোদী ট্রাম্পের প্রশংসায় কোনো কার্পণ্য করেননি, এবং আমেরিকার নির্বাচনকালীন হামলার বিশেষ উল্লেখও করেছেন। লেক্স ফ্রিডম্যানের এই পডকাস্ট ট্রাম্পও নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন, যেমনটি মোদীও করেছেন।

আমেরিকা ও চীনের মতোই মোদী পাকিস্তান সংক্রান্ত প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন এবং স্পষ্ট বলেছেন যে, পাকিস্তান থেকে সবসময়ই বিশ্বাসঘাতকতা পাওয়া গেছে। পুরো কথোপকথনের সারাংশ এটিই যে, পাকিস্তান নিয়ে মোদী অত্যন্ত হতাশ, তবে একই সময়ে চীন নিয়ে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী বলে মনে হয়—এবং হ্যাঁ, এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্পের ওপর মোদীর গভীর বিশ্বাস রয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এমন কতদিন চলবে?

প্রধানমন্ত্রী মোদীর মতে, পাকিস্তানের পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনিতেই দেশটির অবস্থা ভয়াবহ খারাপ।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রসঙ্গে মোদী নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা মনে করিয়ে দেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রধানদের আমন্ত্রণ জানান, যার মধ্যে পাকিস্তানও ছিল। পাকিস্তান সাড়া দিয়েছিল, কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। উরি থেকে শুরু করে পুলওয়ামা পর্যন্ত একাধিক ঘটনার নজির রয়েছে।

মোদী আগেও বলেছেন যে, পাকিস্তানকে পরিচালিত করছে “নন-স্টেট অ্যাক্টরস” (রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তি), তাই কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না—কাদের সঙ্গে কথা হবে? রাষ্ট্রের বাইরের শক্তিগুলোর সঙ্গে কি আলোচনা সম্ভব?

তিনি বলেন, বিশ্বে যেখানে যেখানে সন্ত্রাসী হামলা হয়, তার সূত্র পাকিস্তানের দিকেই যায়… ১১ সেপ্টেম্বরের হামলাই ধরুন… সেই হামলার মাস্টারমাইন্ড ওসামা বিন লাদেন কোথায় লুকিয়ে ছিল? সে পাকিস্তানেই আশ্রয় নিয়েছিল।

সব মিলিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মোদী চরম হতাশ, তবে অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে আলাদা।

ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত

ভারত ও চীনের সম্পর্ক দেশটির রাজনৈতিক আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ও সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রায়ই সমালোচিত হন—আর সংসদে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী তো এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করেন না।

তবে মোদীর বক্তব্যে চীন নিয়ে আশাবাদের স্পষ্ট ছাপ দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, “আমাদের সম্পর্ক ভবিষ্যতেও দৃঢ় থাকবে… প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে বৈঠকের পর সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে… আমরা ২০২০-এর আগের পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছি… বিশ্বাস ফিরে পেতে সময় লাগবে, তবে আমরা সংলাপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ… ২১ শতক এশিয়ার শতক… ভারত ও চীনকে প্রতিযোগিতা করা উচিত, সংঘাত নয়।”

ট্রাম্প-মোদীর বন্ধুত্ব ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি

পডকাস্টে মোদীকে প্রশ্ন করা হয়, একজন বন্ধু ও নেতা হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোন বিষয়টি তাকে সবচেয়ে আকর্ষণ করে?

মোদী উত্তর দেন, “আমি একটি ঘটনা শেয়ার করতে চাই… হয়তো এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আমি কী বলতে চাইছি… হিউস্টনে একটি অনুষ্ঠান ছিল ‘হাউডি মোদী’… আমি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুজনেই সেখানে উপস্থিত ছিলাম, এবং স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ… আমরা দুজনেই বক্তব্য দিচ্ছিলাম, এবং ট্রাম্প নিচে বসে মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন… এটা তার মহানুভবতার পরিচয়… যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্টেডিয়ামের ভিড়ের মধ্যে নিচে বসে আমাদের বক্তব্য শুনছিলেন… আমি বক্তৃতা শেষে ট্রাম্পের কাছে গেলাম এবং বললাম, ‘আমরা কেন না একসঙ্গে স্টেডিয়ামের চারপাশে হেঁটে আসি? এখানে অনেক মানুষ আছে, তাদের ধন্যবাদ জানানো উচিত।’

“আমেরিকার সংস্কৃতিতে এটি একেবারে অকল্পনীয় যে, প্রেসিডেন্ট হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে হাঁটবেন। কিন্তু ট্রাম্প এক মুহূর্তও না ভেবে আমার সঙ্গে হাঁটা শুরু করলেন… তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল… সেই মুহূর্ত আমাকে স্পর্শ করেছিল।”

মোদী ট্রাম্পকে “সাহসী” নেতা বলেছেন, যিনি নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনার মাধ্যমে মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, ট্রাম্পও মোদীর ওপর কতটা আস্থাশীল।

মোদী বলেছেন, “এটা পারস্পরিক বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ছিল, যা আমাদের সম্পর্কের দৃঢ়তা দেখায়… হাজারো মানুষের ভিড়ে নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে আমার সঙ্গে হাঁটা, এটি অসাধারণ মুহূর্ত ছিল।”

মোদী মার্কিন নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “যখন ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল, তখনও আমি সেই একই সাহসী ও দৃঢ়চেতা ট্রাম্পকে দেখেছিলাম, যে ব্যক্তি সেদিন আমার হাত ধরে স্টেডিয়ামের মধ্যে হেঁটেছিল।”

হতে পারে, রাশিয়ার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের চিত্র এতটা দৃশ্যমান নয়, তবে মোদীর ট্রাম্প নিয়ে মন্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককেই ইঙ্গিত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *