আমেরিকায় ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের খরচ কমাচ্ছে, এটা কি ট্রাম্পের প্রভাব?

আমেরিকায় ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের খরচ কমাচ্ছে, এটা কি ট্রাম্পের প্রভাব?

মার্কিন অর্থনীতি, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের সময় পূর্ণ গতিতে চলছিল, তার কার্যকালের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চাপের লক্ষণ দেখাতে শুরু করেছে। ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে গেছে, শেয়ার বাজারে অস্থিরতা চলছে এবং চাকরি ছাঁটাই বাড়ছে।

মধ্যবিত্ত আমেরিকান এবং ধনী বিনিয়োগকারীরা এখন চাপ অনুভব করছেন।

বাজারের অস্থিরতা এবং ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে ক্রেতারা তাদের খরচ কমাচ্ছেন, যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ট্রাম্প অর্থনৈতিক মন্দার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে অস্বীকার করেছেন, যদিও সাম্প্রতিক শেয়ার বাজারের ক্ষতির ফলে উচ্চ আয়ের আমেরিকানদের সম্পদ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, যারা মার্কিন ভোক্তা ব্যয়ের মূল চালিকাশক্তি।

বাজারে অস্থিরতা

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন শুধু অর্থনৈতিক উদ্বেগের প্রতিফলন নয়, এটি তার কারণও হতে পারে। বিনিয়োগকারীরা প্রথমে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিল, তবে তার প্রশাসনের আগ্রাসী ও অপ্রত্যাশিত শুল্ক নীতির কারণে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় এই উচ্ছ্বাস কমে গেছে। S&P 500, যা ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে ৫৩ শতাংশ বেড়েছিল, এই বছর এখন পর্যন্ত ৪.১ শতাংশ কমে গেছে।

হার্ভার্ডের অর্থনীতিবিদ গ্যাব্রিয়েল চোডোরো-রিচ অনুমান করছেন যে ২০২৫ সালে শেয়ারের মূল্য ২০ শতাংশ কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে এবং এর প্রভাব ওয়াল স্ট্রিটের বাইরেও দেখা যাবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট অনুযায়ী, রাফার ফান্ড ম্যানেজার অ্যালেক্স চার্ট্রেস বলেছেন যে আমেরিকার মতো অর্থনীতিতে সম্পদের মূল্য প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হতে পারে। সম্পদ বাজারের পতন বাস্তব অর্থনীতির দুর্বলতার ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

বছরের পর বছর ধরে শেয়ারের বাড়তি মূল্য ভোক্তা ব্যয় বাড়িয়েছে, বিশেষ করে ধনী আমেরিকানদের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে শীর্ষ ১০ শতাংশ আয় করা মানুষ, যারা এখন আমেরিকার মোট খরচের প্রায় অর্ধেক বহন করে। ফেডারেল রিজার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে শীর্ষ ১০ শতাংশ পরিবারের গড়ে ২.১ মিলিয়ন ডলার শেয়ারে বিনিয়োগ ছিল, যা তাদের মোট সম্পদের ৩২ শতাংশ, যেখানে ২০১০ সালে এটি ছিল ২৬ শতাংশ। গত চার বছরে তাদের ব্যয় ৫৮ শতাংশ বেড়েছে, যা আংশিকভাবে শেয়ার বাজারের মুনাফার কারণে।

খরচ কমানোর ইঙ্গিত

এটি শুধু অতি ধনীদের ক্ষেত্রেই নয়। খুচরা বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষে মার্কিন পরিবারগুলোর মোট আর্থিক সম্পদের ৪৩ শতাংশ রেকর্ড শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ ছিল। এটি মার্কিন অর্থনীতিকে সম্পদের দামের পতনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তোলে। বাজারের ধারাবাহিক পতন ব্যয়ে গুরুতর পতন আনতে পারে, যা অর্থনীতিবিদরা ‘ধন-সম্পদ প্রভাব’ (Wealth Effect) বলে অভিহিত করেন। ডয়েচে ব্যাংকের অনুমান অনুসারে, যদি গত বছর শেয়ার বাজারে বৃদ্ধি না হয়ে স্থিতিশীল থাকত, তবে ভোক্তা ব্যয়ের বৃদ্ধি ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ হতো।

ডয়েচে ব্যাংকের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ ম্যাথিউ লুজেত্তি বলেন, অনেক আমেরিকানের জন্য অবসর সঞ্চয়ের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। যদি শেয়ারের পড়তি দাম তাদের সেই লক্ষ্যের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তবে তারা ব্যয় কমাতে পারে। বাজারের মন্দা কর্পোরেট সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনতে পারে। ব্যবসায়িক নেতারা প্রায়ই কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ কৌশলের পরিকল্পনা করার সময় তাদের কো ম্পা নির শেয়ারের দামের দিকে মনোযোগ দেন। ২০২২ সালে ন্যাসড্যাক তার মূল্যের এক-তৃতীয়াংশ হারানোর পর, প্রযুক্তি খাত ব্যাপক ছাঁটাই ও ব্যয় সংকোচন করেছিল।

খুচরা বিক্রয়ে প্রভাব

খুচরা বিক্রেতারা, যারা গত বছরের শেষের দিকে শক্তিশালী বিক্রির রিপোর্ট দিয়েছিল, এখন মন্দার সতর্কতা দিচ্ছে। কনসালটেন্সি ফার্ম রিটেইলনেক্স অনুসারে, মার্চের শুরুতে মার্কিন স্টোরগুলিতে গ্রাহক উপস্থিতি বছরে ৪.৩ শতাংশ কমেছে, যা জানুয়ারিতে শুরু হওয়া পতনকে অব্যাহত রেখেছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস রিপোর্ট করেছে যে প্লেসার এআই দ্বারা ট্র্যাক করা মোবাইল ডেটা দেখায়, ওয়ালমার্ট, টার্গেট এবং বেস্ট বাইয়ের মতো প্রধান খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে কম গ্রাহক আসছেন।

জানুয়ারিতে খুচরা বিক্রয় ০.৯ শতাংশ কমেছে, যা ২০২৩ সালের পর সবচেয়ে বড় মাসিক পতন ছিল। যদিও কিছু অর্থনীতিবিদ এর জন্য অস্বাভাবিক ঠান্ডা আবহাওয়াকে দায়ী করেছেন। সোমবার প্রকাশিত হতে যাওয়া ফেব্রুয়ারির পরিসংখ্যান আরও ইঙ্গিত দেবে যে ভোক্তা ব্যয় কমতে শুরু করেছে কিনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *