সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়: বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার

বাবার সম্পত্তি নিয়ে শুধু বাবা-ছেলের মধ্যে নয়, বাবা-মেয়ে এবং ভাই-বোনের মধ্যেও বিরোধ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ মানুষ জানেন না, সম্পত্তির উপর কার কতটা অধিকার রয়েছে, যা অজ্ঞতার কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে।
এখন সুপ্রিম কোর্ট বাবার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ের অধিকার নিয়ে বড় রায় দিয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, বিবাহিত ও অবিবাহিত কন্যার বাবার সম্পত্তিতে কতটা অধিকার রয়েছে। আসুন, সুপ্রিম কোর্টের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়
সুপ্রিম কোর্টে বাবার সম্পত্তিতে কন্যার অধিকার সংক্রান্ত একটি মামলা উঠেছিল, যা মাদ্রাজ হাইকোর্টের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এই মামলাটি তামিলনাড়ুর এক নারী তার সম্পত্তির অধিকার চেয়ে দায়ের করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ ৫১ পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে।
এই রায় অনুযায়ী, এখন থেকে যৌথ পরিবারেও মেয়েদের সম্পত্তির অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের মতে, যৌথ পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে, তার সম্পত্তিতে ভাইপোদের চেয়ে তার মেয়েকে বেশি অধিকার দেওয়া হবে। এমনকি, ১৯৫৬ সালের হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের আগে অর্জিত সম্পত্তিতেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
আগে কন্যাদের সম্পত্তির অধিকার কতটা ছিল?
প্রায় ৭০ বছর আগে, ১৯৫৬ সালের হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে ছেলেদেরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। তখন কন্যাদের সম্পত্তির ভাগ দেওয়া হতো তখনই, যখন ছেলেরা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে নিত। আইনে তখন কেবল মেয়েদের বাড়িতে থাকার অধিকার ছিল, তবে তা অবিবাহিত, বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত অবস্থায় প্রযোজ্য ছিল।
বিবাহিত মেয়েরা শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তিতে কোনো অধিকার পেত না। পরে ১৯৫৬ সালের আইনে পরিবর্তন আনা হয় এবং কন্যারা সম্পত্তিতে আরও বেশি অধিকার পেতে শুরু করেন।
২০০৫ সালের আইনের পরিবর্তন
২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে সংশোধন করে কন্যাদের সম্পত্তির অধিকারকে ছেলেদের সমান করে দেওয়া হয়। এর ফলে, মেয়েরা বাবার সম্পত্তিতে সমান অধিকারী হয়ে যান। এর আগে, বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার খুব সীমিত ছিল।
২০২০ সালে আবার পরিবর্তন
২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের সীমিত অধিকার সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন করে। নতুন রায় অনুসারে, ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালের আগে বাবার মৃত্যু হলেও কন্যা সম্পত্তিতে ছেলের সমান অংশ পাবে। অর্থাৎ, বাবার মৃত্যুর তারিখ মেয়ের সম্পত্তির অধিকারকে প্রভাবিত করবে না।
সন্তানের সম্পত্তির অধিকার
অনেকেই মনে করেন যে, সন্তানদের বাবার সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার রয়েছে, কিন্তু আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে তা সঠিক নয়। বাবা-মায়ের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে সম্পত্তির বণ্টন হয়। বাবা যদি নিজের উপার্জিত সম্পত্তির জন্য কোনো উইল না করেন, তাহলে সন্তানদের মধ্যে সেই সম্পত্তি ভাগ করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত বদল
এই মামলায় আগে মাদ্রাজ হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছিল, যা সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করেছে। এক মামলায় দেখা যায়, এক বাবার ১৯৪৯ সালে মৃত্যুর সময় কোনো উইল ছিল না। তিনি যৌথ পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং তার একমাত্র সন্তান ছিল মেয়ে।
মাদ্রাজ হাইকোর্ট এই সম্পত্তি তার ভাইপোদের দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাবার একমাত্র কন্যার পক্ষে রায় দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ছেলেদের মতো মেয়েরাও বাবার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাবেন। যদি বাবা কোনো উইল না করে মারা যান, তবে তার সম্পত্তি ছেলে-মেয়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে।