থার কিনবেন নাকি ওয়াগনআর? গাড়ি কিনতে বেতন কত হওয়া উচিত? ২০-৪-১০ নিয়ম সবকিছু ব্যাখ্যা করে

অমনের কাছে গাড়ি আছে, তাহলে আমাকেও একটা গাড়ি কিনে নেওয়া উচিত। আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ অন্যদের দেখে গাড়ি কিনে ফেলেন। কেউ কেউ এটিকে তাদের সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখেন। তবে এটি একটি আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে, কারণ এতে আপনি ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
তাই প্রশ্ন হলো, কার জন্য গাড়ি প্রয়োজন? কখন গাড়ি কেনা জরুরি? আপনার বেতন গাড়ি কেনার উপযোগী কি না, এসব জানার পরেই কারও গাড়ি কেনার কথা ভাবা উচিত।
আসলে, সহজেই গাড়ির ঋণ পাওয়া যায়, তাই অনেক মানুষ না ভেবেই গাড়ি কিনে ফেলেন। কেউ কেউ তো চাকরি পাওয়ার সাথেই সাথেই গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, যা ভুল হতে পারে। যদিও গাড়ি কেনা ভুল কিছু নয়, কিন্তু আর্থিকভাবে আপনি এটি কেনার উপযুক্ত কি না, তা একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।
কারণ, গাড়ি এমন একটি সম্পদ যা শোরুম থেকে বের করার সাথে সাথেই তার মূল্য কমতে থাকে। অর্থাৎ, মাসের পর মাস এটি অবমূল্যায়িত হতে থাকে। তাই গাড়ি কেনার আগে ভাবতে হবে, আপনার জন্য এটি কতটা প্রয়োজনীয়।
বেশিরভাগ মানুষ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনেন। কিন্তু গাড়ি ছাড়া কি আপনার কাজ চলে যাবে? এটি ভেবে দেখা দরকার। তাছাড়া, যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে আপনাকে গাড়ি কিনতেই হবে, তাহলে গাড়ির দাম আপনার পছন্দ অনুযায়ী হওয়া উচিত নয়, বরং তা নির্ভর করবে আপনার মাসিক আয়ের উপর।
কী এই ২০-৪-১০ নিয়ম?
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে একটি জনপ্রিয় নিয়ম রয়েছে, যা বলে দেয় আপনার বেতনের ভিত্তিতে কত টাকার গাড়ি কেনা উচিত এবং তার মাসিক কিস্তি (EMI) কত হওয়া উচিত। এই নিয়মকে ২০/৪/১০ বলা হয় এবং এটি আপনার উপার্জনের ভিত্তিতে আপনাকে দিকনির্দেশনা দেয়।
এই নিয়মে ২০ মানে হলো, যখন আপনি গাড়ি কিনবেন, তখন অন্তত ২০% টাকা ডাউন পেমেন্ট (প্রাথমিক পরিশোধ) করতে হবে। যদি ৩০% দিতে পারেন, তবে আরও ভালো। কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ এটি করেন না। অর্থাৎ, গাড়ি কেনার আগে আপনার কাছে অন্তত ২০% ডাউন পেমেন্টের টাকা থাকা উচিত।
৪ মানে হলো, গাড়ির ঋণের মেয়াদ সর্বাধিক ৪ বছর হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই ৫-৭ বছরের জন্য ঋণ নিয়ে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী, ৪ বছরের মধ্যে গাড়ির ঋণ পরিশোধ করা উচিত।
১০ মানে হলো, আপনার মাসিক বেতনের মাত্র ১০% গাড়ির কিস্তি (EMI) হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার মাসিক বেতন ১ লাখ টাকা হয়, তবে আপনার গাড়ির EMI হবে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। যদি আপনি ১ লাখ টাকা বেতনে ২৫ লাখ টাকার গাড়ি কিনে নেন, তাহলে এটি একটি ভুল আর্থিক সিদ্ধান্ত হবে।
উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক:
যদি আপনার মাসিক বেতন ১ লাখ টাকা হয়, তাহলে ১০% হিসেবে আপনার গাড়ির EMI হওয়া উচিত ১০,০০০ টাকার মধ্যে। আর্থিক নিয়ম অনুযায়ী, আপনার গাড়ির মোট মূল্য হওয়া উচিত ৭-৮ লাখ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে ২০-৩০% ডাউন পেমেন্ট করুন এবং বাকি টাকা ৪ বছরের জন্য EMI তে পরিশোধ করুন। আপনি গাড়ির উন্নত মডেলের বদলে বেস মডেলও নিতে পারেন, যা তুলনামূলকভাবে কম খরচসাপেক্ষ হবে।