প্রায় নয় মাসের দীর্ঘ মহাকাশ অভিযান শেষে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন নাসার নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে চড়ে তিনি এবং তাঁর সহকর্মী বুচ উইলমোর ফ্লোরিডা উপকূলে অবতরণ করবেন। তাঁদের অবতরণের সময় নির্ধারিত হয়েছে ভোর ৩:২৭ মিনিটে।

২০২৪ সালের ৫ জুন সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর বোয়িং-এর স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে মহাকাশে যাত্রা শুরু করেছিলেন। মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটি ছিল মাত্র আট দিনের একটি পরীক্ষামূলক মিশন। কিন্তু স্টারলাইনারে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তাঁদের যাত্রা দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ে। হিলিয়াম লিক এবং প্রোপালশন সিস্টেমে সমস্যার কারণে মহাকাশযানটি অবতরণের জন্য অনিরাপদ হয়ে ওঠে। ফলে, নাসাকে বিকল্প পথ খুঁজতে হয়।

স্টারলাইনারের ত্রুটির কারণে মহাকাশযানটি মহাকাশচারীদের ছাড়াই পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই পরিস্থিতিতে উইলিয়ামস এবং উইলমোরের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে নাসা স্পেসএক্স-এর ক্রু-৯ মিশনের সাহায্য নেয়। এই মিশনে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং রোসকসমসের আলেকজান্ডার গরবুনভ। এই বিকল্প পরিকল্পনা তাঁদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পথ প্রশস্ত করে।

নয় মাসের দীর্ঘ মহাকাশে অবস্থানকালে সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর ১৫০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অংশ নেন। শূন্য মাধ্যাকর্ষণে মানবদেহের উপর প্রভাব, উদ্ভিদ গবেষণা এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পরীক্ষা এই সময়ে তাঁরা সম্পন্ন করেন। এই গবেষণাগুলো ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।

আইএসএস-এ অবস্থানরত ক্রু-১০ দল তাঁদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে। স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে করে ১৭ ঘণ্টার যাত্রা শেষে তাঁরা পৃথিবীতে পৌঁছাবেন। এই প্রক্রিয়ায় নাসা এবং স্পেসএক্স-এর সমন্বিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নয় মাস মহাকাশে কাটানোর পর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য করা উইলিয়ামস এবং উইলমোরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তবে এই মিশন শুধু তাঁদের জন্যই নয়, ভবিষ্যৎ মহাকাশ গবেষণার জন্যও একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের এই অভিযান মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং তাঁদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে এই অধ্যায় সফলভাবে সমাপ্ত হতে চলেছে।