৮ মাসের প্রেম, পরিণতি হত্যা! প্রেমিকের ষড়যন্ত্রে স্বামীর নির্মম মৃত্যু

৮ মাসের প্রেম, পরিণতি হত্যা! প্রেমিকের ষড়যন্ত্রে স্বামীর নির্মম মৃত্যু

উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর থেকে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে মাত্র ৮ মাসের প্রেম এক ব্যক্তিকে খুনি বানিয়ে দিল। ঘটনাটি শুরু হয় যখন এক বিবাহিত নারীর স্বামী তার স্ত্রী এবং তার প্রেমিকের আপত্তিকর ছবি দেখে ফেলে।

গোপন প্রেমের ফাঁদে মৃত্যু

স্বামীর হাতে প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ধরা পড়ার পর থেকেই দম্পতির মধ্যে প্রতিদিন ঝগড়া হচ্ছিল। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে স্ত্রী তার প্রেমিক ও তার সঙ্গীদের সাথে পরিকল্পনা করে স্বামীকে অপহরণ ও হত্যা করানোর ষড়যন্ত্র করে।

বিজনৌরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাম অর্জ জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তের পর অভিযুক্ত নারী, তার প্রেমিক এবং তাদের সমস্ত সহযোগীসহ মোট নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তি তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার রহস্য

শিবালা কালা থানার অন্তর্গত শাহবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা পারুল ১৪ মার্চ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে তিনি জানান যে তার স্বামী মকেন্দ্র ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় ওষুধ আনতে বেরিয়েছিলেন কিন্তু আর ফিরে আসেননি। তবে, তার স্কুটিটি গ্রামের বাইরে পড়ে ছিল।

১৫ মার্চ, আমরোহা জেলার হাসানপুর থানার অন্তর্গত বাওনহেডি গ্রামের জঙ্গলে মকেন্দ্রের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার গলা ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পারে যে পারুলের সঙ্গে এক ব্যক্তি, বিনিৎ শর্মার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। সন্দেহের বশে দুজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার পুরো চিত্র সামনে আসে।

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড

পারুল ও বিনিৎ স্বীকার করেন যে, মকেন্দ্র তাদের সম্পর্ক সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলেন এবং স্ত্রীর মোবাইলে তাদের আপত্তিকর ছবি দেখে ফেলেছিলেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়া লেগেই থাকত। ১৩ মার্চ, মকেন্দ্র রাজস্থানে তার কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু এই সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো মকেন্দ্রকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পারুল ও বিনিৎ একটি পরিকল্পনা করে।

নৃশংস হত্যা

১৩ মার্চ সন্ধ্যায় পারুল তার স্বামী মকেন্দ্রকে ওষুধ আনার অজুহাতে বাইরে পাঠান। এই সময় বিনিৎ তার সাত সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে ওঁত পেতে ছিল। মকেন্দ্র বের হতেই তারা তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় এবং আমরোহার বাওনহেডি গ্রামের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে বিনিৎ প্রথমে নিজের বেল্ট দিয়ে মকেন্দ্রের গলা টিপে ধরে, এরপর অন্য এক অভিযুক্ত লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। মকেন্দ্রের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা তার মৃতদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

গ্রেফতার ও প্রমাণ সংগ্রহ

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পুলিশ পারুল, বিনিৎ এবং তাদের সহযোগীসহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ি, ছয়টি মোবাইল ফোন, হত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত বেল্ট এবং লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী, পারুল ও বিনিৎ প্রায় আট মাস ধরে অবৈধ সম্পর্কে জড়িত ছিল।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে অবৈধ সম্পর্কের মোহ কতটা ভয়ঙ্কর পরিণতি আনতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *