যে জাসুসী জাহাজের মাধ্যমে ইরান আমেরিকাকে হুমকি দিচ্ছিল, এখন সেটি হঠাৎ করে গায়েব

যেখানে প্রতিটি নেতা ট্রাম্পের সাথে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত, সেখানে ইরান অবিচ্ছিন্নভাবে আমেরিকার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। পারমাণবিক থেকে লাল সাগর পর্যন্ত উভয় দেশেই উত্তেজনা চলছে। এখন লাল সাগরে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে উত্তেজনা একটি নতুন মোড় নিয়েছে।
কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকান নৌবাহিনী ইরানের সবচেয়ে অত্যাধুনিক গোয়েন্দা জাহাজ ‘জাগরোস’কে ডুবিয়ে দিয়েছে। এই জাহাজ সিগনাল ইনটেলিজেন্স (SIGINT) এ বিশেষজ্ঞ ছিল এবং এটিকে ইরানের নৌবাহিনীর সবচেয়ে আধুনিক গোয়েন্দা জাহাজ হিসেবে মনে করা হতো।
এটা এমন একটি জাহাজ, যার সাহায্যে ইরান আমেরিকাকে ক্রমাগত চোখ দেখাচ্ছিল। সৌদি মিডিয়া আল-হাদথ অনুযায়ী, আমেরিকান সেনাবাহিনী এই জাহাজটিকে লক্ষ্যবস্তু করে এবং একটি হামলায় এটি সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। তবে, এই ঘটনার কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ এখনও হয়নি। এর মধ্যে, ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা আমেরিকার বিরুদ্ধে আক্রমণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা দাবি করেছে যে গত ৪৮ ঘণ্টায় তৃতীয়বারের মতো আমেরিকান যুদ্ধজাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
আমেরিকা দাবি করেছে এটি মিথ্যা
হুতি বিদ্রোহীরা দাবি করেছে যে, তারা ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান ক্যারিয়ার গ্রুপে মিসাইল ও ড্রোন হামলা করেছে। তবে, আমেরিকান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এটিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন এবং বলছেন যে হুতি বিদ্রোহীরা তাদের হামলাগুলোর সফলতা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে।
হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলাগুলি এমন সময়ে করেছে, যখন আমেরিকা এবং ইসরায়েল গাজার উপর কঠোর আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩০ জন নিহত হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হুতি বিদ্রোহীরা অবিচ্ছিন্নভাবে লাল সাগরে জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। যদিও, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির পর এসব হামলায় কিছুটা কমতি এসেছিল, তবে এখন তারা আবার হামলা বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে।
আমেরিকার সতর্কতা
ইয়েমেনে আমেরিকান বিমান হামলার পর হাজার হাজার হুতি সমর্থক সড়কে নেমে প্রতিবাদ করেছে। রাজধানী সানা, সাদা, ধামার, হোদেদা এবং আমরান শহরে আমেরিকা এবং ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়। অপরদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্কতা দিয়েছেন যে, যদি হুতি বিদ্রোহীরা লাল সাগরে জাহাজে হামলা চালিয়ে যায়, তবে তাদের ওপর “নরক বর্ষণ” করা হবে। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এখন থেকে প্রতিটি হুতি হামলা ইরানের হামলা হিসেবে গণ্য হবে এবং তেহরানকে এর ফল ভোগ করতে হবে।
আমেরিকার হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ
আমেরিকা সম্প্রতি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ৩০টিরও বেশি স্থানে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ৫৩ জন নিহত এবং ৯৮ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি আমেরিকান হামলার নিন্দা করে বলেছেন যে, ওয়াশিংটনকে তেহরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার কোনো অধিকার নেই। অন্যদিকে, আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন যে, হুতি বিদ্রোহীদের অস্তিত্ব ইরান ছাড়া সম্ভব নয়। ইরান এই “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন” তৈরি করেছে এবং এখন তাকে এর মূল্য চোকাতে হবে।
বিশ্ব বাণিজ্যেও প্রভাব
লাল সাগরে ক্রমাগত এই হামলার কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাব পড়ছে। সাধারণত, বিশ্বের বাণিজ্যের ১২% অংশ এই রুটের মাধ্যমে চলে, কিন্তু এখন জাহাজগুলোকে আফ্রিকার দক্ষিণ সীমানা দিয়ে দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল পথ অবলম্বন করতে হচ্ছে। হুতি বিদ্রোহীরা গত বছর অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩০ বার লাল সাগরে জাহাজ এবং যুদ্ধজাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এখন দেখতে হবে, আমেরিকার এই প্রতিক্রিয়া হুতি এবং ইরানকে থামাতে পারবে কিনা, নাকি এই সংঘর্ষ আরও বাড়বে।
4o mini