নরমাংসভক্ষণ: মানুষ মানুষের মাংস খাচ্ছে – একটি বিস্তারিত ইতিহাস!

মানুষের মাংস খাওয়ার প্রথাকে নরমাংসভক্ষণ বা ক্যানিবালিজম বলা হয়। ইংরেজিতে একে অ্যানথ্রোপোফেজি (Anthropophagy) বলা হয়। সাধারণভাবে ক্যানিবালিজম বলতে বোঝায় একটি প্রাণী বা জীব তার নিজ প্রজাতির শরীর খায়।
এটা কি সত্য নাকি গুজব?
প্রাচীনকালে নরমাংসভক্ষণের জন্য বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিজের আদিবাসী ক্যারিব লোকদের নামে ক্যারিবালস বা ক্যানিবালস শব্দটি তৈরি হয়েছে। তবে আধুনিক গবেষকদের সন্দেহ আছে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সত্যিই এমন ঘটনা ঘটেছিল কিনা। ক্যারিব লোকরা ইউরোপীয় শক্তিগুলির বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক বিরোধী যুদ্ধে জড়িত ছিল, তাই অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে স্প্যানিশরা ভয় ছড়ানোর জন্য নরমাংসভক্ষণের গুজব ছড়িয়েছিল।
তবে ক্যারিব লোকরা মানব অঙ্গকে কাপ হিসেবে ব্যবহার করার কিছু প্রমাণ আছে। তাই নরমাংসভক্ষণ সম্ভবত একটি যুদ্ধ কৌশল বা ভয় দেখানোর পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হত। প্রাথমিক প্রমাণগুলি বেশিরভাগ কলম্বাসের কাছ থেকে এসেছে, যিনি ক্যারিব লোকদের যতটা সম্ভব বর্বর দেখাতে চেয়েছিলেন।
নরমাংসভক্ষণের ইতিহাস
প্রাচীন মানব ইতিহাসে নরমাংসভক্ষণের প্রথা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে পাওয়া যায়। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা, মেলানেশিয়া (বিশেষ করে ফিজি, নিউ গিনি), অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনগণ, পলিনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ, সুমাত্রার কিছু আদিবাসী এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ে এই প্রথা প্রচলিত ছিল।
কিছু স্থানে মানুষের মাংসকে খাদ্য হিসেবে দেখা হত, আবার কিছু জায়গায় এটি অনুষ্ঠানিক প্রথা ছিল। মাওরি লোকেরা যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের মাংস খেত। সুমাত্রার বাটাক লোকেরা মানুষের মাংস বাজারে বিক্রি করত।
অনুষ্ঠান ও জাদুবিদ্যা
আফ্রিকায় অনুষ্ঠানিক হত্যা ও নরমাংসভক্ষণ প্রায়ই জাদুবিদ্যার সাথে যুক্ত ছিল। মানব শিকারিরা এবং অন্যান্যরা মৃত শত্রুদের শরীর বা মাথা খেত যাতে তাদের শক্তি শোষণ করা যায়। অ্যাজটেক সভ্যতায়ও নরমাংসভক্ষণের প্রথা ছিল, যেখানে যুদ্ধবন্দীদের বলি দেওয়া হত।
আধুনিক যুগে নরমাংসভক্ষণ
আধুনিক যুগেও কিছু স্থানে নরমাংসভক্ষণের ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ক্ষুধা ও যুদ্ধের কারণে নরমাংসভক্ষণের ঘটনা ঘটেছে। রাশিয়ার লেনিনগ্রাডে ৮৭২ দিনের অবরোধের সময় মানুষের মাংস খাওয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
উপসংহার
নরমাংসভক্ষণ মানব ইতিহাসের একটি অংশ, কিন্তু আধুনিক সভ্যতায় এটিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। এই প্রথা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত কারণে উদ্ভূত হয়েছিল। তবে আজ এই প্রথা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু এর ইতিহাস বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।