নয় মাসে সুনিতা উইলিয়ামস কতটা বদলে গেছেন, আগের এবং এখনকার মধ্যে এত পার্থক্য কেন?

মহাকাশে নয় মাস কাটানোর পর, নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং তার সহকর্মী বুচ উইলমোর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। এই দীর্ঘ অভিযানের সময়, তার শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, যা যেকোনো মহাকাশচারীর জন্য স্বাভাবিক।
যখন কেউ মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটায়, তখন শূন্য মাধ্যাকর্ষণ বা মাইক্রোমাধ্যাকর্ষণ এবং বদ্ধ পরিবেশ শরীরের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
এই পরিবর্তনগুলি হাড়, পেশী, হৃদয়, মস্তিষ্ক এমনকি মানসিক অবস্থাকেও প্রভাবিত করে। এখন যেহেতু সে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে, তার শরীর আবার সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়ার জন্য তাকে কয়েক মাস পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
পেশী এবং হাড়ের উপর প্রভাব
মহাকাশে নয় মাস কাটানোর পর, শরীরের হাড় এবং পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। মাধ্যাকর্ষণের অভাবে, হাড়ের ঘনত্ব প্রতি মাসে প্রায় ১% হ্রাস পায়, যা হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ায়। একইভাবে, পেশীগুলি, বিশেষ করে পা এবং পিঠের পেশীগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে কারণ সেখানে শরীরের ওজন অনুভূত হয় না।
তবে, এই প্রভাব কমাতে, মহাকাশচারীরা প্রতিদিন প্রায় ২.৫ ঘন্টা কঠোর ব্যায়াম করেন, যার মধ্যে রয়েছে ওজন তোলার ব্যায়াম, স্কোয়াট, ডেডলিফ্ট এবং ট্রেডমিলে দৌড়ানোর মতো কার্যকলাপ। তা সত্ত্বেও, একবার ফিরে আসার পর তাদের আবার স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে এবং দৌড়াতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
মহাকাশ থেকে ফেরার সময় তোলা ছবি।
দৃষ্টিশক্তি কীভাবে প্রভাবিত হয়?
মহাকাশে যাওয়া সকল যাত্রীর মুখ একটু ফোলা দেখাচ্ছে। এর কারণ হল, সেখানে কোনও মাধ্যাকর্ষণ বল না থাকার কারণে, শরীরের তরল পদার্থগুলি নীচের দিকে সরে না গিয়ে মাথার দিকে সরে যায়। এর ফলে মুখ ফুলে যায় এবং কিছু মহাকাশচারীর দৃষ্টি সমস্যাও হতে পারে। অনেক সময়, এই চাপ চোখের আকৃতিকে প্রভাবিত করে এবং ফিরে আসার পরে তাদের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
এটি রক্ত প্রবাহকেও প্রভাবিত করে
মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবের কারণে, পৃথিবীতে হৃদয়কে যতটা পরিশ্রম করতে হয় ততটা করতে হয় না। ফলস্বরূপ, এটি সামান্য সঙ্কুচিত হয় এবং এর পাম্পিং ক্ষমতাও কিছুটা হ্রাস পায়। এটি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে এবং মহাকাশচারীরা ফিরে আসার পর দুর্বলতা এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, বিজ্ঞানীরা AI মাধ্যাকর্ষণ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন যাতে মহাকাশেও শরীর পৃথিবীর মতো পরিবেশ পেতে পারে।
মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়
দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকা কেবল শরীরকেই নয়, মানসিক অবস্থারও প্রভাব ফেলে। বদ্ধ পরিবেশ, পৃথিবী থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে থাকার অনুভূতি এবং রিয়েল-টাইম যোগাযোগের অভাব মানসিক চাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মহাকাশচারীদের মস্তিষ্কের গঠনও পরিবর্তিত হতে পারে।
মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকল (তরল-ভরা গহ্বর) আকারে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। উপরন্তু, মাধ্যাকর্ষণের অভাব শরীরের ভারসাম্য এবং সমন্বয় সাধনের ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে, যা ফিরে আসার পরে কিছু সময়ের জন্য ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন করে তুলতে পারে।
মহাকাশে যাওয়ার আগে তোলা ছবি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়
মহাকাশে, আমরা পৃথিবীর তুলনায় বহুগুণ বেশি মহাজাগতিক বিকিরণের সম্মুখীন হই। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র আমাদের এই বিকিরণ থেকে রক্ষা করে, কিন্তু মহাকাশে এর অনুপস্থিতি ডিএনএ ক্ষতি এবং ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে, এই বিপদ কমাতে, বিজ্ঞানীরা নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থা, সুরক্ষা প্রযুক্তি এবং ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছেন যা এই বিকিরণ থেকে ডিএনএকে রক্ষা করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিবর্তন
দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে। গবেষণা অনুসারে, শরীরের শ্বেত রক্তকণিকা মাইক্রোগ্রাভিটিতে দুর্বল হয়ে পড়ে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়াও, শরীরের বিপাকও প্রভাবিত হয়, যার কারণে কিছু মহাকাশচারীর হঠাৎ ওজন কমে যেতে পারে বা তাদের ক্ষুধা কমে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী মিশনের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ সেখানে পুষ্টি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখন আরও দীর্ঘ যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি
সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের অভিজ্ঞতা বিজ্ঞানীদের মঙ্গল এবং তার বাইরে ভবিষ্যতের যাত্রা পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। যদি মানুষকে মঙ্গলে পাঠানো হয়, তাহলে এত দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকার ফলে শরীরের উপর কী প্রভাব পড়ে এবং এর মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।