নেহা কক্করের মেলবোর্ন কনসার্টে ৪.৫২ কোটি টাকার ক্ষতি, আয়োজকদের বিস্ফোরক পালটা জবাব

মুম্বই, ৩০ মার্চ ২০২৫: ভারতের জনপ্রিয় গায়িকা নেহা কক্করের মেলবোর্ন কনসার্ট ঘিরে বিতর্ক যেন থামার নাম নিচ্ছে না। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠানে তিন ঘণ্টা দেরি করে পৌঁছানো এবং মঞ্চে কান্নাকাটির ঘটনায় শ্রোতাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন নেহা। এরপর সোশাল মিডিয়ায় আয়োজকদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তুলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। তবে এবার পালটা জবাব দিয়ে মুখ খুলল আয়োজক সংস্থা ‘বিটস প্রোডাকশন’। তাদের দাবি, নেহার ‘অপেশাদারিত্ব’ এবং ‘দুর্ব্যবহারের’ কারণে কমপক্ষে ৪.৫২ কোটি টাকার (৫২৯,০০০ ডলার) আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
কী ঘটেছিল মেলবোর্নে?
গত ২৩ মার্চ মেলবোর্নের মার্গারেট কোর্ট অ্যারেনায় নেহা কক্করের কনসার্টের আয়োজন করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পরে মঞ্চে পৌঁছান তিনি। অপেক্ষারত শ্রোতাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে এবং তারা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নেহা। তিনি বলেন, “আপনারা অনেক ধৈর্য ধরেছেন। এতক্ষণ অপেক্ষা করেছেন। আমি এটা ঘৃণা করি। জীবনে কখনও কাউকে অপেক্ষা করাইনি।” কিন্তু শ্রোতাদের একাংশ তাঁর এই আবেগকে ‘নাটক’ বলে উড়িয়ে দেন।
ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ায় নেহা দাবি করেন, আয়োজকরা তাঁর এবং তাঁর দলের জন্য কোনও ব্যবস্থা করেননি। “আমার ব্যান্ডকে খাবার, জল বা হোটেল—কিছুই দেওয়া হয়নি। আয়োজকরা আমার টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তবু আমি বিনামূল্যে পারফর্ম করেছি, কারণ ভক্তরা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন,” বলে লেখেন তিনি। তিনি আরও জানান, শব্দ পরীক্ষার জন্য ভেন্ডরকে টাকা না দেওয়ায় সাউন্ড সিস্টেম চালু হয়নি, যা দেরির অন্যতম কারণ।
আয়োজকদের পালটা দাবি
নেহার অভিযোগের জবাবে আয়োজক সংস্থা বিটস প্রোডাকশন সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। তারা বলছে, “নেহার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা তাঁর জন্য পাঁচতারা হোটেল, একাধিক গাড়ি এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তাঁর অপেশাদারিত্বের জন্য আমাদের ৪.৫২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাঁকে ডাকাই আমাদের ভুল হয়েছে।”
প্রমাণ হিসেবে তারা ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দরে নেহাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে এবং তাঁর জন্য বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আয়োজকদের দাবি, “তিনি যখন বিমানবন্দরে পৌঁছান, আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং গাড়িতে করে গন্তব্যে পৌঁছে দিই। তাঁর দলের জন্যও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল।”
এছাড়া, তারা জানিয়েছে, নেহার দলের সদস্যরা ক্রাউন টাওয়ার্সের শিল্পী কক্ষে ধূমপান করেছেন, যা অস্ট্রেলিয়ার কঠোর নিয়মের পরিপন্থী। ফলে সংস্থাটি মেলবোর্ন ও সিডনির ক্রাউন টাওয়ার্সে নিষিদ্ধ হয়েছে। শুধু তাই নয়, মার্গারেট কোর্ট অ্যারেনাতেও তাদের ভবিষ্যৎ অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
আর্থিক ক্ষতির হিসেব
আয়োজকরা একটি বিস্তারিত খরচের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাদের হিসেবে, মেলবোর্ন ও সিডনি কনসার্টে মোট খরচ হয়েছে ৭,০৯,২০০ ডলার, যেখানে আয় হয়েছে মাত্র ১,৮০,০০০ ডলার। ফলে ৫,২৯,০০০ ডলারের (প্রায় ৪.৫২ কোটি টাকা) ক্ষতি গুনতে হচ্ছে তাদের। “আমরা এখন ঋণে ডুবে আছি। নেহার আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত,” বলে দাবি করেন সংস্থার একজন প্রতিনিধি।
দুই পক্ষের বিতর্কে ভক্তরা বিভক্ত
এই বিতর্কে নেহার ভক্তরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ নেহার পক্ষ নিয়ে বলছেন, আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। অন্যদিকে, কেউ কেউ আয়োজকদের প্রমাণের ভিত্তিতে নেহার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
নেহার স্বামী রোহানপ্রীত সিং তাঁর পক্ষে সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “আমার স্ত্রী এবং তাঁর দলের প্রতি শ্রদ্ধা। এত সমস্যার মধ্যেও তারা পারফর্ম করেছে।” তবে আয়োজকদের সর্বশেষ দাবির জবাবে এখনও কিছু বলেননি নেহা।
কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ?
এই ঘটনা শুধু নেহা কক্করের ক্যারিয়ারের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় শিল্পীদের আয়োজন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। আয়োজকরা জানিয়েছে, তারা শিগগিরই আরও প্রমাণ প্রকাশ করবে। অন্যদিকে, নেহার পরবর্তী জবাবের অপেক্ষায় রয়েছেন ভক্তরা। এই বিতর্কের পরিণতি কী হবে, তা সময়ই বলবে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট—এই ঘটনা সংগীত জগতের আলোচনায় দীর্ঘদিন থেকে যাবে।