মুম্বই, ৩০ মার্চ ২০২৫: আইপিএল ২০২৫-এর শুরুটা রোহিত শর্মার জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম দুই ম্যাচে মিলেছে হতাশা—প্রথম ম্যাচে শূন্য আর গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৮ রান। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্রাক্তন অধিনায়কের এই ব্যাটিং বিপর্যয়ে প্রশ্ন উঠছে তাঁর ফর্ম নিয়ে। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা এবার রোহিতের অফ ফর্মের খতিয়ান তুলে ধরে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। বীরেন্দ্র শেহওয়াগ তো সরাসরি খোঁচা দিয়ে বলেছেন, “১৮ বছরেও যেখানে ৬০০-৭০০ রান করতে পারেনি, এখন কী আর করবে?”

দুই ম্যাচে হতাশার ছবি

গুজরাটের বিরুদ্ধে শনিবার ম্যাচে রোহিত আশার আলো দেখিয়েছিলেন। ইনিংসের প্রথম তিন বলে দুটি চার মেরে শুরুটা করেন দাপটে। কিন্তু চতুর্থ বলে মহম্মদ সিরাজের ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এই নিয়ে গত নয়টি আইপিএল ইনিংসে ছয়বার তিনি ১০ রানের নিচে আউট হয়েছেন। গত পাঁচ মরশুমের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, শুধু ২০২৪ সালে তিনি ৪০০-এর বেশি রান করেছেন। তবে সেটাও একটি সেঞ্চুরি সহ ৪১৭ রান, যা ‘হিটম্যান’ খ্যাত রোহিতের কাছ থেকে প্রত্যাশিত মানের কাছাকাছিও নয়।

শেহওয়াগের কটাক্ষ, তিওয়ারির উপদেশ

ভারতের প্রাক্তন ওপেনার বীরেন্দ্র শেহওয়াগ রোহিতের ফর্ম নিয়ে সরাসরি আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন। একটি টিভি শো-তে তিনি বলেন, “আমরা সবাই রোহিতের ভক্ত। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, গত ১৮ বছরে আইপিএল-এ কবে ও ৬০০-৭০০ রান করেছে? কেরিয়ারের এই পর্যায়ে এসে ও যদি এখনও না করতে পারে, তাহলে ভাবাটাই বাড়াবাড়ি।” শেহওয়াগের এই মন্তব্যে তর্কের ঝড় উঠেছে।

অন্যদিকে, প্রাক্তন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি রোহিতের পক্ষে কিছুটা সাফাই গাইলেও সমালোচনা থেকে বিরত থাকেননি। তিনি বলেন, “রোহিতের এবার রানে ফেরা জরুরি। গতবার ৪০০ রান করেছিল, একটা সেঞ্চুরিও ছিল। কিন্তু এটা ওর ক্ষমতার কাছে কিছুই নয়। শেষ কবে একটা মরশুমে ৮০০-৯০০ রান করেছে? বিরাট কোহলি যেভাবে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে, রোহিতেরও তেমন কিছু করা উচিত। মুম্বই ওকে এই জন্যই রিটেন করেছে।”

ফর্ম হারানোর গল্প

ক্রিকেট বিশ্লেষক সঞ্জয় মঞ্জরেকর রোহিতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “চার বছর আগে রোহিত যে ফর্মে ছিল, এখন তার ছায়াও নেই। ও এখন এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রতিদিন নিজেকে ট্রেনিংয়ে টেনে নিয়ে যেতে হয়। অনেক কিছু হাত ফসকে যাচ্ছে। এখন ওর ভরসা শুধু প্রতিভা আর স্বাভাবিক খেলার ধরন।” মঞ্জরেকরের মতে, বয়স এবং চাপের কারণে রোহিতের ব্যাটিংয়ে সেই পুরনো ধার আর দেখা যাচ্ছে না।

গত বছর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কত্ব বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রোহিত। হার্দিক পাণ্ড্যের নেতৃত্বে দল পরিবর্তনের পরও তাঁর ব্যাটিং ফর্ম ফেরেনি। ২০২৩ সালে ৩৩২ রান, ২০২২-এ ২৬৮ রান—এই পরিসংখ্যান তাঁর ধারাবাহিকতার অভাবই প্রকাশ করে। তবে ভক্তরা মনে করেন, গুজরাট ম্যাচে প্রথম তিন বলে দুটি চারে তিনি যে ঝলক দেখিয়েছিলেন, তাতে ফিরে আসার সম্ভাবনা এখনও বাকি আছে।

রোহিতের চ্যালেঞ্জ কী?

আইপিএল-এ রোহিতের কেরিয়ার পরিসংখ্যান দেখলে চোখে পড়ে, তিনি কখনও এক মরশুমে ৬০০ রানের গণ্ডি পেরোননি। তাঁর সর্বোচ্চ রান ৫৫২ (২০১১), যখন তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে খেলেছিলেন। মুম্বইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৩৮ রান এসেছিল ২০১৩ সালে। এরপর থেকে তিনি ৪০০-৫০০ রানের মধ্যেই আটকে গেছেন। তুলনায় বিরাট কোহলি ২০১৬ সালে ৯৭৩ রান করে আইপিএল-এর ইতিহাসে বেঞ্চমার্ক তৈরি করেছিলেন। এই তুলনাই রোহিতের ব্যর্থতাকে আরও স্পষ্ট করে।

মুম্বইয়ের এক ভক্ত রাকেশ পাটেল বলেন, “রোহিতের কাছে আমরা বড় ইনিংস আশা করি। ও যদি শুরুতে দুটো চার মারতে পারে, তাহলে ৫০-৬০ রান কেন নয়? কিন্তু বারবার হতাশ হচ্ছি।”

ফিরতে পারবেন হিটম্যান?

দুই ম্যাচে পর পর হারের পর মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এখন চাপে। রোহিতের ওপর ভরসা রেখে তাঁকে রিটেন করা হলেও, তিনি যদি ব্যাট হাতে না ফেরেন, দলের ভাগ্য বদলানো কঠিন। শেহওয়াগের কটাক্ষে সত্যতা থাকলেও, রোহিতের প্রতিভা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হল—৩৮ বছর বয়সে এসে কি তিনি আবার সেই পুরনো ছন্দে ফিরতে পারবেন? আগামী ম্যাচগুলোই হয়তো তার উত্তর দেবে। তবে এটা স্পষ্ট, ‘হিটম্যান’ যদি ফিরে না আসেন, মুম্বইয়ের পাশাপাশি তাঁর ভক্তদেরও হতাশা বাড়বে।