পুতিনের কনভয়ে বিস্ফোরণের ধাক্কা! জেলেনস্কির ভবিষ্যদ্বাণীর পর মস্কোয় চাঞ্চল্য

পুতিনের কনভয়ে বিস্ফোরণের ধাক্কা! জেলেনস্কির ভবিষ্যদ্বাণীর পর মস্কোয় চাঞ্চল্য

মস্কো, ৩০ মার্চ ২০২৫: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কনভয়ের একটি বিলাসবহুল গাড়িতে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজধানী মস্কোয় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শনিবার মস্কোর লুবিয়াঙ্কা এলাকায়, রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা এফএসবি-র সদর দফতরের কাছেই এই ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর গাড়িটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনার সময় পুতিন গাড়িতে না থাকলেও, এই দুর্ঘটনার সময়টা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, মাত্র কয়েক দিন আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি পুতিনের ‘মৃত্যু’র ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

কী ঘটেছিল মস্কোর রাস্তায়?

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শনিবার দুপুরে মস্কোর ব্যস্ত রাস্তায় পুতিনের কনভয়ের একটি অরাস সেনাত লিমোজিন গাড়িতে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এই গাড়ির মূল্য প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ড। সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গাড়ির ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়, এরপর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে যায় রাস্তা। দমকল বাহিনী পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন ও কাছাকাছি রেস্তোরাঁর কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীনে থাকা এই গাড়িতে কে ছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সৌভাগ্যবশত এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

জেলেনস্কির ভবিষ্যদ্বাণী ও সন্দেহের জট

এই ঘটনার সময়টা যতটা না আকস্মিক, তার চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। গত ২৬ মার্চ প্যারিসে ইউরোপীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছিলেন, “পুতিন শীঘ্রই মারা যাবেন। এটা একটা সত্য। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটবে।” তিনি আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানান, “মস্কোর ওপর চাপ বজায় রাখতে শক্ত থাকুন।”

জেলেনস্কির এই বক্তব্যের মাত্র চার দিন পর এই বিস্ফোরণ ঘটায় অনেকেই এটিকে পরিকল্পিত হামলার সঙ্গে যুক্ত করছেন। রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ এফএসবি ইতিমধ্যে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে। ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এটি নিছক দুর প্রযুক্তিগত ত্রুটি, নাকি ষড়যন্ত্র—সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এটা কি হামলা?

ঘটনার পেছনে বৈদেশিক হাত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে রুশ প্রশাসন। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে মস্কো সতর্ক করে দিয়েছিল, পুতিনের বিরুদ্ধে কোনও হামলা হলে তার জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। এই বিস্ফোরণের পর সেই আশঙ্কা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।

ক্রিমিয়ার এক সাংবাদিক অ্যান্ড্রু কোস্টিন বলেন, “এটা কাকতালীয় হতে পারে না। জেলেনস্কির মন্তব্য আর এই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতেই পারে। তবে এটা প্রমাণিত হলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নতুন মোড় নিতে পারে।” তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘হামলা’ বলে ঘোষণা করেনি।

মানুষের মনে প্রশ্ন

মস্কোর রাস্তায় এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী ইভান পেট্রোভ বলেন, “গাড়িটা হঠাৎ জ্বলে উঠল। আমরা ভেবেছিলাম কোনও সিনেমার শুটিং হচ্ছে। কিন্তু যখন শুনলাম এটা পুতিনের কনভয়ের গাড়ি, তখন ভয় লাগল।”

এদিকে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এখনও কোনও মন্তব্য আসেনি। তবে গত কয়েক মাসে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে একাধিক ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা এই সন্দেহকে আরও জোরালো করছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

ক্রেমলিন এই ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তদন্তে যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে শুরু করে বোমা বিস্ফোরণ—সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “যদি এটি হামলা প্রমাণিত হয়, তবে এর জবাব কঠোর হবে। আমরা শান্ত থাকব না।”

জেলেনস্কির ভবিষ্যদ্বাণী এবং এই বিস্ফোরণের মধ্যে কোনও সংযোগ আছে কিনা, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনা কি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন উত্তেজনা যোগ করবে? নাকি এটি কেবল একটি দুর্ঘটনা? তদন্তের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করছে এর জবাব। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট—এই ঘটনা বিশ্ব রাজনীতির আলোচনায় দীর্ঘদিন থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *