‘লাঠি দিয়ে মেরে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করা উচিত ছিল’—অখিল গিরিকে তীব্র আক্রমণ দিলীপ ঘোষের

কলকাতা, ৩০ মার্চ ২০২৫: কাঁথি কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন ঘিরে শনিবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব মেদিনীপুর। তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ভোটকেন্দ্র। এই ঘটনায় সামনে এসেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তাঁকেও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। দিন শেষে ফলাফলে তৃণমূলের জয়জয়কার হলেও বিজেপি গড়ে শূন্য হাতে ফিরেছে। এই পরাজয় মেনে নিতে না পেরে রবিবার বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ অখিল গিরির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন, যা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
দিলীপের আক্রমণ, অখিলের জবাব
রবিবার সকালে প্রাতঃভ্রমণের সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দিলীপ ঘোষ। কাঁথির ভোট নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি সরাসরি অখিল গিরিকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, “অখিল গিরি গতকাল গুন্ডামি করেছেন। ওঁকে মেরে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া উচিত ছিল। লাঠি দিয়ে মারা উচিত ছিল। একজন বিধায়ক যদি ভোটকেন্দ্রে অশান্তি করে, তাহলে কি লোকে চুপ করে থাকবে? তৃণমূলের অ্যাজেন্ডাই অশান্তি।” দিলীপের এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গেছে।
পাল্টা জবাবে অখিল গিরি দাবি করেছেন, তিনি বরং আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, “পুলিশের লোকই আমার গায়ে হাত তুলেছে। ভোটারদের হেনস্থা করা হয়েছে। জেরক্স কপি নিয়ে এসেছে বলে তাদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। আমি শুধু তাদের পক্ষ নিয়েছিলাম।” অখিলের অভিযোগ, পুলিশ নিরপেক্ষ থাকেনি, যার ফলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।
কী ঘটেছিল কাঁথিতে?
শনিবার কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ১১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। মোট ৭৮টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় তৃণমূল। বাকি ৬০টি আসনে ভোট হয়। কিন্তু ভোট শুরু হতেই কাঁথির জাতীয় বিদ্যালয় ও রামনগর কলেজ ক্যাম্পাসে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা অখিল গিরির ওপর হামলা চালায়। পাল্টা তৃণমূলও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা অমিত দাস বলেন, “ভোটকেন্দ্রে চিৎকার, ধাক্কাধাক্কি, এমনকি হাতাহাতি—সবই চলছিল। অখিল গিরি সামনে এসে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁকেও ঘিরে ফেলে বিজেপি কর্মীরা।” পুলিশ হস্তক্ষেপ করলেও, অখিলের অভিযোগ, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি।
ফলাফলে তৃণমূলের দাপট
সন্ধ্যায় গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা হয়। শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলে পরিচিত কাঁথিতে বিজেপি শূন্য হাতে ফেরে। তৃণমূল কংগ্রেস ৬০টি আসনের সবকটিতেই জয় ছিনিয়ে নেয়। তৃণমূল শিবিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। এক কর্মী বলেন, “এটা আমাদের শক্তির প্রমাণ। বিজেপি যতই চেষ্টা করুক, জনগণ আমাদের সঙ্গে।”
কিন্তু এই পরাজয় বিজেপির গলায় আটকে গেছে। দিলীপ ঘোষের মতে, তৃণমূলের ‘গুন্ডামি’ই তাদের হারের কারণ। তিনি বলেন, “ওরা ভোটে জিততে পারে না, তাই অশান্তি করে। অখিল গিরির মতো নেতারা এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।”
দিলীপের বিতর্কিত ইতিহাস
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য নতুন নয়। এর আগেও তিনি বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য শিরোনামে এসেছেন। গত সপ্তাহে খড়গপুর ও কৃষ্ণনগরে মহিলাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এবার অখিল গিরিকে ‘লাঠিপেটা’র পরামর্শ দিয়ে তিনি আবার বিতর্কের কেন্দ্রে। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “পরাজয়ের হতাশা থেকেই দিলীপবাবু এমন উস্কানি দিচ্ছেন। এটা তাঁর চরিত্রের প্রতিফলন।”
রাজনৈতিক তরজা কোন দিকে?
কাঁথির এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে। বিজেপি দাবি করছে, তৃণমূল ভোটে অশান্তি ছড়িয়ে জিতেছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি হারের জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে দায়ী করছে। অখিল গিরি বলেন, “আমি গুন্ডামি করিনি, বরং ভোটারদের অধিকার রক্ষা করেছি। দিলীপ ঘোষের মন্তব্য তাঁদের হারের হতাশা।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘটনা আগামী দিনে দুই দলের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়াতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—এই রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাঝে তাদের স্বার্থ কোথায়? কাঁথির ভোট যুদ্ধ শেষ হলেও, বিতর্কের আগুন জ্বলছে। দিলীপের এই মন্তব্য কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।