মুকেশ অম্বানির অ্যান্টিলিয়া: এক মাসের বিদ্যুৎ বিলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার স্বপ্ন!

আপনার বাড়িতে মাসিক বিদ্যুৎ বিল কত আসে? ৫ হাজার টাকা? না কি ১০ হাজার টাকা ছুঁয়ে যায়? এখন একবার ভাবুন, দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের অঙ্কটা কত হতে পারে! শুনলে চোখ কপালে উঠবে—এই টাকায় একজন সাধারণ ভারতীয় সারা জীবনের খরচ চালিয়ে দিতে পারেন। মুকেশ অম্বানি ও তাঁর স্ত্রী নীতা অম্বানির ২৭ তলা বিলাসবহুল বাসভবন ‘অ্যান্টিলিয়া’ শুধু জাঁকজমকের প্রতীক নয়, এটি এমন এক জীবনযাত্রার নমুনা যা সাধারণ মানুষের কল্পনারও বাইরে। চলুন, এই গল্পটা একটু খুঁটিয়ে জানা যাক।
অ্যান্টিলিয়ার জন্মকথা
মুম্বইয়ের বিলিয়নেয়ার্স রো-তে অবস্থিত অ্যান্টিলিয়ার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। প্রায় পাঁচ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ২০১০ সালে এটি পুরোপুরি তৈরি হয়। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই ২৭ তলা বাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। খরচের দিক থেকে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে দামি বাসভবন, যার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিটেনের বাকিংহাম প্যালেস। আটলান্টিক মহাসাগরের একটি কিংবদন্তি দ্বীপের নামে নামকরণ করা এই বাড়িটির রহস্যময় আবেদন শুধু এর নামেই সীমাবদ্ধ নয়, এর গঠন ও বৈশিষ্ট্যেও রয়েছে অভূতপূর্ব বৈচিত্র্য।
বিলাসিতার এক অনন্য নিদর্শন
৪ লক্ষ বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত অ্যান্টিলিয়া শুধু একটি বাড়ি নয়, এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জগৎ। এখানে রয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড, ১৬৮টি গাড়ির জন্য পার্কিং, সুইমিং পুল, স্পা, থিয়েটার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং একটি মন্দির। বাড়ির প্রতিটি তলার ডিজাইন আলাদা, যা এর স্থাপত্যের বৈচিত্র্যকে আরও উজ্জ্বল করে। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্যক্তিগত বাসভবন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুকেশ ও নীতা অম্বানি তাঁদের তিন সন্তানকে নিয়ে এখানে বসবাস শুরু করেন। তবে এই বাড়ির জাঁকজমকের পাশাপাশি যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে, তা হলো এর বিদ্যুৎ বিল।
বিদ্যুৎ বিলের চমকপ্রদ অঙ্ক
অ্যান্টিলিয়ার মতো বিশাল ও অত্যাধুনিক বাড়ির বিদ্যুৎ খরচ যে সাধারণ পরিবারের থেকে অনেক বেশি হবে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু প্রথম মাসের বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ শুনলে যে কারও চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অ্যান্টিলিয়ায় খরচ হয়েছিল ৬,৩৭,২৪০ ইউনিট বিদ্যুৎ। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ দিয়ে মুম্বইয়ের প্রায় ৭ হাজার মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসিক চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর এর জন্য বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ৭০ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৮৮ টাকা। তবে দ্রুত পেমেন্টের জন্য ৪৮ হাজার ৩৫৪ টাকার ছাড় পাওয়ায় চূড়ান্ত বিল দাঁড়ায় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা।
একজন সাধারণ ভারতীয় যিনি দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তিনি সারা জীবনেও এত টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার কথা কল্পনা করতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুল বিদ্যুৎ খরচের পেছনে রয়েছে অ্যান্টিলিয়ার উন্নত সুবিধা—যেমন এয়ার কন্ডিশনড পার্কিং, উচ্চ ক্ষমতার লিফট এবং অত্যাধুনিক আলোকসজ্জা।
বিলাসিতার পেছনের গল্প
অ্যান্টিলিয়ার এই বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সময়ে সময়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। অনেকে বলেন, এটি অম্বানি পরিবারের অতুলনীয় সম্পদ ও জীবনযাত্রার প্রতিফলন। তবে এই বাড়ি শুধু বিলাসিতার প্রতীক নয়, এটি একটি প্রকৌশল বিস্ময়ও। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতা রাখা এই বাড়িতে ৬০০ জনের বেশি কর্মী কাজ করেন। তাঁদের বসবাস, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাড়ির সব সুবিধা চালু রাখতে এই বিপুল বিদ্যুৎ খরচ অবশ্যম্ভাবী।
শেষ কথা
মুকেশ অম্বানির অ্যান্টিলিয়া শুধু একটি বাড়ি নয়, এটি সাফল্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং অতুলনীয় জীবনযাত্রার প্রতীক। প্রতি মাসে ৭০ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল সাধারণ মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, অম্বানি পরিবারের জন্য এটি তাঁদের জীবনধারার একটি অংশ মাত্র। পরের বার যখন আপনি নিজের বিদ্যুৎ বিলের অঙ্ক দেখে মাথায় হাত দেবেন, তখন একবার অ্যান্টিলিয়ার এই গল্পটা মনে করে দেখবেন—আমাদের ছোট্ট সমস্যাগুলো কত তুচ্ছ হয়ে যায় এর কাছে!