নয়াদিল্লি: দেশের বৃহত্তম বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর মূল কো ম্পা নি ইন্টারগ্লোব এভিয়েশনের উপর আয়কর বিভাগ ৯৪৪.২০ কোটি টাকার জরিমানা আরোপ করেছে। এই আদেশ শনিবার জারি হয়েছে এবং রবিবার কো ম্পা নি এটি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশ করেছে। তবে ইন্ডিগো এই জরিমানাকে ‘ভুল ও অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে আইনি পথে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঘটনা টেলিকম সেক্টরের পর এভিয়েশন শিল্পে আর্থিক বিতর্কের নতুন অধ্যায় যোগ করল। কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হল এবং এর প্রভাব কী হতে পারে, আসুন বিশ্লেষণ করা যাক।

জরিমানার পেছনে কারণ: আয়কর বিভাগের দাবি

ইন্ডিগোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আয়কর বিভাগের মূল্যায়ন ইউনিট ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এই জরিমানা আরোপ করেছে। স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেওয়া বিবৃতিতে কো ম্পা নি জানিয়েছে, “আয়কর আইনের ১৪৩(৩) ধারার অধীনে মূল্যায়ন আদেশের বিরুদ্ধে কো ম্পা নি আয়কর কমিশনার (আপিল)-এর কাছে যে আবেদন করেছিল, সেটি খারিজ হয়ে গেছে বলে আয়কর কর্তৃপক্ষ ভুল ধারণার ভিত্তিতে এই আদেশ জারি করেছে। কিন্তু বাস্তবে সেই আপিল এখনও বিচারাধীন এবং নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।”

ইন্ডিগোর দাবি, এই ভুল বোঝাবুঝির কারণেই জরিমানার পরিমাণ এত বিশাল হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় জারি করা এক বিবৃতিতে বিমান সংস্থাটি বলেছে, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আয়কর কর্তৃপক্ষের এই আদেশ আইনসম্মত নয়। এটি ভুল ও অযৌক্তিক। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।”

আর্থিক প্রভাব নিয়ে ইন্ডিগোর আশ্বাস

এত বড় অঙ্কের জরিমানা সত্ত্বেও ইন্ডিগো জানিয়েছে, এটি তাদের আর্থিক অবস্থা, পরিচালনা বা অন্যান্য কার্যক্রমে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না। কো ম্পা নির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই আদেশের কারণে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপে কোনো বড় ধাক্কা লাগবে না। আমরা আমাদের শক্তিশালী অবস্থান থেকে এটি মোকাবিলা করব।”

এই আশ্বাসের পেছনে ইন্ডিগোর বাজারে দাপটই প্রধান ভরসা। ভারতের এভিয়েশন সেক্টরে ইন্ডিগোর বাজার অংশীদারিত্ব ৬৪.৪ শতাংশ (DGCA, ২০২৪ তথ্য অনুযায়ী), যা এয়ার ইন্ডিয়ার ২৬.৪ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। তবে সম্প্রতি কো ম্পা নির মুনাফা ১৮.৬ শতাংশ কমে ২,৪৪৮.৮ কোটি টাকায় নেমেছে (FY25-এর তৃতীয় ত্রৈমাসিক), যা পরিচালন ব্যয় ২০ শতাংশ বৃদ্ধির ফল। এমন পরিস্থিতিতে এই জরিমানা কো ম্পা নির জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

ইন্ডিগোর আইনি পদক্ষেপ: কী হবে পরবর্তী?

ইন্ডিগো স্পষ্ট জানিয়েছে যে তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের কর বিরোধ ভারতের বড় কো ম্পা নিগুলোর জন্য নতুন নয়। আর্থিক বিশ্লেষক অমিত শর্মা বলেন, “ইন্ডিগোর আর্থিক ভিত শক্ত। ৯৪৪ কোটি টাকা বড় অঙ্ক হলেও, আপিলের মাধ্যমে এটি চ্যালেঞ্জ করা সাধারণ প্রক্রিয়া। তাদের ব্যালান্স শিট এই ধাক্কা সামলাতে পারবে।”

ইন্ডিগোর আগেও কর সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়েছে। ২০২২ সালে আয়কর ট্রাইব্যুনাল থেকে তারা একটি মামলায় জয় পেলেও, ২০০৮ সাল থেকে বেশ কিছু বিষয় দিল্লি হাইকোর্ট ও আয়কর কমিশনারের (আপিল) কাছে বিচারাধীন। এবারের জরিমানা যদিও ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে, তবে কো ম্পা নি আশাবাদী যে আইনি পথে তারা সফল হবে।

ইন্ডিগো: ভারতের আকাশের রাজা

ইন্ডিগো ভারতের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় কম খরচের বিমান সংস্থা। দেশের প্রধান শহরগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে এর পরিষেবা বিস্তৃত। সাশ্রয়ী টিকিট, সহজ বুকিং ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন বিমান ও গ্রাহক পরিষেবার জন্য এটি প্রশংসিত। ২০২৪ সালে দেশে বিমানযাত্রী সংখ্যা ৬.১২ শতাংশ বেড়ে ১৬.১৩ কোটিতে পৌঁছেছে (DGCA তথ্য), এবং এর বড় অংশ ইন্ডিগোর হাতে। এই আর্থিক শক্তি ও বাজার দখলই কো ম্পা নিকে এই সংকটে আত্মবিশ্বাসী রাখছে।

শেষ কথা

ইন্ডিগোর উপর আয়কর বিভাগের ৯theory ৯৪৪ কোটি টাকার জরিমানা একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, কো ম্পা নির দৃঢ় অবস্থান ও আইনি লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি এটিকে নতুন আলোয় এনেছে। এই আদেশ কো ম্পা নির ভবিষ্যৎ কৌশল ও আর্থিক স্বাস্থ্যের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা আপিলের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে। তবে ইন্ডিগোর বাজার শক্তি ও গ্রাহক ভিত্তি বিবেচনায়, এটি এই ঝড় পার করতে পারবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী দিনে আদালতের রায়ই এই গল্পের পরবর্তী মোড় ঠিক করবে।