ইরানকে ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি: পরমাণু চুক্তি না মানলে বোমায় গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

ইরানকে ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি: পরমাণু চুক্তি না মানলে বোমায় গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

ওয়াশিংটন: পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে আমেরিকার উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চুক্তি না মানলে দেশটির উপর এমন বোমা হামলা চালানো হবে, যা ইতিহাসে এর আগে কেউ দেখেনি। এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই হুমকি দিয়েছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বালিয়েছে। পাশাপাশি, তিনি ইরানের উপর বিপুল শুল্ক আরোপেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই হুমকির পেছনে কী রয়েছে এবং এর প্রভাব কী হতে পারে, আসুন বিশ্লেষণ করা যাক।

ট্রাম্পের স্পষ্ট বার্তা: বোমা বা শুল্ক

রবিবার এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “ইরান যদি পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর না করে, তবে তাদের উপর এমন বোমা হামলা হবে, যা এর আগে কেউ প্রত্যক্ষ করেনি।” তবে তিনি বিকল্প পথও খোলা রেখেছেন। তিনি যোগ করেন, “আরেকটি সম্ভাবনা হলো—চুক্তি না মানলে ইরানের উপর বিশাল অঙ্কের শুল্ক আরোপ করা হবে।” এই দ্বিমুখী হুমকি ইরানের জন্য কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে—হয় চুক্তি মেনে নিতে হবে, নয়তো সামরিক বা অর্থনৈতিক শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে চলতি মাসে ইরানকে নতুন পরমাণু চুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য দুই মাসের সময়সীমা দিয়েছিল। হোয়াইট হাউস থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে চিঠি পাঠিয়ে এই বার্তা দেওয়া হয়। সেই চিঠিতে সমঝোতার পাশাপাশি ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও ছিল।

ইরানের জবাব: আলোচনা হ্যাঁ, চাপে নয়

শনিবার ইরান ট্রাম্পের চিঠির জবাবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে। তেহরান জানায়, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। চাপ ও সামরিক হুমকির মধ্যে আমরা সরাসরি আলোচনায় বসব না। তবে অতীতের মতো পরোক্ষ আলোচনার পথ খোলা থাকতে পারে।” ইরানের এই প্রতিক্রিয়া ছিল সংযত, তবে ট্রাম্প রবিবারের সাক্ষাৎকারে এই শর্তের কোনো উল্লেখ না করে সরাসরি হামলার হুমকি দিয়ে চাপ আরও বাড়িয়েছেন।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র গত সপ্তাহে বলেছিলেন, “ট্রাম্পের চিঠি মূলত হুমকি দিয়ে ভরা, তবে এটি কিছু সুযোগও তৈরি করতে পারে। আমরা শিগগিরই এর জবাব দেব।” তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকি এই আলোচনার সম্ভাবনাকে ধূসর করে দিয়েছে।

পেছনের গল্প: পরমাণু চুক্তির টানাপোড়েন

২০১৫ সালে ইরান ও পি৫+১ দেশগুলোর (যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি) মধ্যে স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA) চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে আমেরিকা বেরিয়ে যায়। ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ইরানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর থেকে ইরান ধীরে ধীরে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে, যা আমেরিকার কাছে উদ্বেগের কারণ।

ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাবিত চুক্তিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সীমিত করা এবং পরমাণু কার্যক্রমে আরও কঠোর বিধিনিষেধের দাবি রয়েছে। তবে ইরান এটিকে তাদের সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

বিশ্লেষণ: হুমকির প্রভাব কী?

ট্রাম্পের এই হুমকি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইরানকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে পারে, অথবা উল্টো দেশটিকে আরও কঠোর অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ড. রাহুল মিত্র বলেন, “ট্রাম্পের এই কৌশল ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির অংশ। তবে ইরানের ইতিহাস বলে, তারা হুমকির মুখে পিছু হটে না। এটি সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।”

অন্যদিকে, শুল্ক আরোপের হুমকি ইরানের তেল রপ্তানি ও অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করতে পারে। ইরানের অর্থনীতি ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত। তবে সামরিক হামলার হুমকি বাস্তবে রূপ নিলে তেলের বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বড় সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

শেষ কথা

ট্রাম্পের এই সরাসরি হুমকি ইরানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। পরমাণু চুক্তি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চললেও, বোমা হামলার হুমকি আলোচনার পরিবর্তে সংঘাতের পথ খুলতে পারে। ইরান কীভাবে এই চাপের জবাব দেয় এবং দুই মাসের সময়সীমায় কী ঘটে, তা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এই উত্তেজনার মধ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়ও নিবিড়ভাবে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *