‘ঘিবলি’ কী, যা নিয়ে পাগল দুনিয়া?

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ঘিবলি’ (Ghibli) শব্দটি ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্র তারকা—সবাই যেন এই ‘ঘিবলি’র জাদুতে মজেছেন। নিজেদের ছবি ‘ঘিবলি স্টাইলে’ রূপান্তরিত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ‘ঘিবলি’ আসলে কী? কেন এটি নিয়ে এত আলোচনা? এর পেছনের গল্প জানতে আমরা খুঁজে এনেছি তথ্য ও বিশ্লেষণ।
‘ঘিবলি’র রহস্য কী?
‘ঘিবলি’ শব্দটির উৎস নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত। তবে এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত জাপানের বিখ্যাত অ্যানিমেশন স্টুডিও ‘স্টুডিও ঘিবলি’র (Studio Ghibli) জন্য। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টুডিওটি হায়াও মিয়াজাকি ও ইসাও তাকাহাতার হাত ধরে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। ‘মাই নেইবার টোটোরো’, ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ বা ‘প্রিন্সেস মনোনোকে’—এই স্টুডিওর ছবিগুলো শুধু অ্যানিমেশন নয়, শিল্পের নিদর্শন। বিশেষ করে ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ ২০০৩ সালে অস্কার জিতে জাজল অ্যানিমেশনকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছে।
কিন্তু ‘ঘিবলি’ শব্দটির শিকড় আরও গভীরে। এটি এসেছে ইতালীয় শব্দ ‘ghibli’ থেকে, যার অর্থ উত্তপ্ত মরুভূমির বাতাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালি এই নামে একটি সামরিক বিমানও তৈরি করেছিল। স্টুডিও ঘিবলির প্রতিষ্ঠাতারা এই নাম বেছে নিয়েছিলেন তাদের সৃষ্টির মাধ্যমে অ্যানিমেশন জগতে ‘নতুন বাতাস’ আনার প্রত্যয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ঘিবলি’ ঝড়
সাম্প্রতিক এই উন্মাদনার কারণ শুধু স্টুডিও ঘিবলির খ্যাতি নয়। গত ২৬ মার্চ, ২০২৫-এ OpenAI তাদের ChatGPT-তে একটি নতুন ফিচার চালু করেছে, যার মাধ্যমে যে কেউ নিজের ছবি ‘ঘিবলি স্টাইল’ অ্যানিমেশনে রূপান্তর করতে পারেন। এই ফিচারটি প্লাস ও প্রো ব্যবহারকারীদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত হলেও ফ্রি ব্যবহারকারীরা সীমিতভাবে এটি ব্যবহার করতে পারছেন। ফল? সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘিবলি-স্টাইলের ছবির বন্যা!
“এটা যেন একটা ম্যাজিক! আমার ছবি দেখে মনে হচ্ছে আমি মিয়াজাকির কোনো ছবির চরিত্র,” বলছেন কলকাতার এক তরুণ গ্রাফিক ডিজাইনার রাহুল সেন। শুধু ভারত নয়, বিশ্বজুড়ে এই ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়েছে।
কেন এত জনপ্রিয় ঘিবলি?
স্টুডিও ঘিবলির অ্যানিমেশন শৈলী প্যাস্টেল রঙ, নরম টোন ও অত্যন্ত বিশদভাবে তৈরি দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গভীর আবেগময় গল্প ও সমাজসচেতন বার্তা। যেমন, ‘প্রিন্সেস মনোনোকে’ পরিবেশ রক্ষার কথা বলে, আর ‘হাউলস মুভিং ক্যাসল’ কল্পনার জগতে মানুষের সম্পর্কের গল্প বুনে। সঙ্গীতশিল্পী জো হিসাইশির সুর এই ছবিগুলোকে আরও মোহময় করে তুলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ট্রেন্ডের পেছনে আধুনিক প্রযুক্তি ও নস্টালজিয়ার মিশেল রয়েছে। “AI-এর মাধ্যমে মানুষ এখন নিজেদের সেই জাদুকরী জগতের অংশ করে তুলতে পারছে, যা ঘিবলি আমাদের দিয়েছে,” বলেন ডিজিটাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ অনন্যা দাস।
এটি কি শুধুই ফ্যাশন?
কেউ কেউ এটিকে ক্ষণস্থায়ী ট্রেন্ড বললেও, অনেকে মনে করেন এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ঘিবলির এই নতুন জনপ্রিয়তা হয়তো তরুণ প্রজন্মকে এর ক্লাসিক ছবিগুলোর দিকে টানবে। “আমি এই ট্রেন্ড দেখে ‘টোটোরো’ দেখলাম। এত সুন্দর গল্প আর ছবি আগে কখনো দেখিনি,” বলছেন দিল্লির ছাত্রী প্রিয়া শর্মা।
শেষ কথা
‘ঘিবলি’ আজ শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা। জাপানের এই অ্যানিমেশন স্টুডিওর শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে AI-চালিত সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড—এর আবেদন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আপনি কি এই ট্রেন্ডে যোগ দিয়েছেন? নাকি ঘিবলির জাদুকরী জগতে প্রবেশের অপেক্ষায়? যাই হোক, এই ‘উত্তপ্ত বাতাস’ এখন থামার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না।