সকালে ২ লিটার জল পান: কিডনির উপর চাপ, ডাক্তারের পরামর্শ কী?

সকালে ২ লিটার জল পান: কিডনির উপর চাপ, ডাক্তারের পরামর্শ কী?

সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক নিঃশ্বাসে ২ লিটার জল পান করা অনেকের অভ্যাস। কিন্তু এই অভ্যাস কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? অভিজ্ঞ নেফ্রোলজিস্টদের মতে, এই প্রথা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কিডনি সুস্থ রাখতে জলর সঠিক পরিমাণ ও পানের নিয়ম জানা জরুরি। তাহলে কতটুকু জল পান করা উচিত? চলুন, বিশেষজ্ঞের মতামত ও বিশ্লেষণে জেনে নিই।

একসঙ্গে অতিরিক্ত জল : কিডনির জন্য হুমকি

সকালে উঠেই ২ লিটার বা তার বেশি জল পান করার প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকে মনে করেন, এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। কিন্তু ভারতের পিএসআরআই হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সঞ্জীব সাক্সেনার মতে, এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। তিনি বলেন, “একসঙ্গে প্রচুর জল পান করলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যারা সকালে ২-৩ বোতল জল একবারে পান করেন, তাদের এই অভ্যাস কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”
ডা. সাক্সেনা পরামর্শ দেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ থেকে ২ গ্লাস (প্রায় ২৫০-৫০০ মিলি) হালকা গরম জল পান করাই যথেষ্ট। এর বেশি একসঙ্গে পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

দিনে কতটুকু জল প্রয়োজন?

কিডনি সুস্থ রাখতে দৈনিক জলের পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৩ লিটার জল পান করা উচিত। তবে এই পরিমাণ পুরো দিনে ভাগ করে পান করতে হবে। ডা. সাক্সেনা ব্যাখ্যা করেন, “যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে কাজ করেন, তাদের এই পরিমাণ মেনে চলা জরুরি। দিনে অন্তত ২ লিটার প্রস্রাব হওয়া উচিত, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়।”
তবে জীবনযাত্রার ধরনের উপরও এটি নির্ভর করে। যেমন, জিমে ব্যায়াম করা বা মাঠে কাজ করা ব্যক্তিদের ঘাম বেশি হয়। তাই তাদের জলের চাহিদা ৩ লিটারের বেশিও হতে পারে।

বিশ্লেষণ: ভারসাম্যই মূল কথা

জল পানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বা কম—দুটোই ক্ষতিকর। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত জল কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমকে অতিরিক্ত চাপে ফেলে, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। আবার জল কম পান করলে ডিহাইড্রেশন ও কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়ে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনভর সমানভাবে জল পান করাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

জনসচেতনতার প্রয়োজন

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় জল পান নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। ‘সকালে ২ লিটার জল পানে শরীর ডিটক্স হয়’—এমন ধারণা থেকে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ডা. সাক্সেনা সতর্ক করে বলেন, “শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বোঝা জরুরি। অতিরিক্ত কিছু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।”

শেষ কথা

কিডনি সুস্থ রাখতে জল পানে ভারসাম্য বজায় রাখুন। সকালে ১-২ গ্লাস, আর দিনে ৩ লিটার জল পরিকল্পিতভাবে পান করুন। আপনার জীবনযাত্রা ও শারীরিক চাহিদা বুঝে জলের পরিমাণ নির্ধারণ করুন। সুস্থ থাকতে অভ্যাসে আনুন সঠিকতা, অতিরিক্ত নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *