ইউনূসের বক্তব্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা: চীনের হাতে কৌশল ব্যর্থ?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সম্প্রতি চীন সফরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে “স্থলবেষ্টিত” হিসেবে বর্ণনা করা এবং বাংলাদেশকে এই অঞ্চলের সমুদ্র পথের “একমাত্র রক্ষক” ঘোষণা করা কূটনৈতিক মহলে বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ইউনূসের এই বক্তব্য, যা চীনের সাথে তার সফরের সময় একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয়, ভারতের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এখন প্রশ্ন উঠছে: কি কারণে ইউনূস এই বক্তব্য দিয়েছেন, এবং ভারত কীভাবে এর জবাব দেবে?
ইউনূসের বক্তব্য: ভারত-বিরোধী সংকেত?
ইউনূস চীন সফরের সময় দাবি করেছেন যে ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য—যাকে “সেভেন সিস্টার্স” বলা হয়—স্থলবেষ্টিত এবং বঙ্গোপসাগরে পৌঁছবার কোনও পথ নেই। তিনি আরও বলেছেন যে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের সমুদ্র পথের একমাত্র রক্ষক, এবং এই সুযোগ চীন ব্যবহার করে তার অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে পারে। এই মন্তব্য ভারতীয় নেতাদের মধ্যে তীব্র সমালোচনা আকর্ষণ করেছে। প্রাক্তন ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এএনআই-কে বলেন, “উত্তর-পূর্ব ভারত ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং ইউনূসের এমন বক্তব্য দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক।” তিনি আরও জানান যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি আছে, যা ইউনূসের দাবিকে অবৈধ করে তোলে।
বাংলাদেশকে সতর্কবাণী: সিক্রির দাবি
সিক্রি বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেন, “যদি বাংলাদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতে সংযোগের অধিকার প্রদানে আগ্রহী না হয়, তাহলে তারা নদী তীরবর্তী অধিকারের আশা করতে পারবে না। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা থেকে দূরে থাকতে হবে।” তিনি ভারত সরকারের কাছে ইউনূসের বক্তব্যের নিন্দা করার দাবি জানান, যা ভারতের সার্বভৌমত্বে প্রশ্ন তুলতে পারে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের উদ্বেগ: চীন-পাকিস্তানের হাত?
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বকশি এই বক্তব্যকে “উদ্বেগজনক” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি এএনআই-কে বলেন, “বাংলাদেশ, চীন, এবং পাকিস্তান শিলিগুড়ি করিডোর (চিকেন নেক) এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মাধ্যমে ভারতকে চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।” তিনি আরও সতর্কবাণী দেন যে ভারত বাংলাদেশের সমুদ্র পথ বন্ধ করে দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। বকশি বলেন, “আমরা বাংলাদেশ তৈরি করেছি, কিন্তু তখন মানচিত্রে আমরা কোনও সুবিধা নিয়োগ করিনি। এখন তাদের এই কৌশল ভারতের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: সতর্কতার কল
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা ইউনূসের বক্তব্যকে “আক্রমণাত্মক এবং নিন্দনীয়” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “ইউনূস চীনের সাথে মিলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আমরা এটি হালকাভাবে নেব না।” তিনি সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টকে আরও আक्रমক স্ট্যান্ড নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষণ: কৌশল ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা
ইউনূসের বক্তব্য স্পষ্টভাবে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করার এবং ভারতকে চাপে ফেলার একটি কৌশল ছিল। তবে, ভারতীয় নেতা এবং বিশেষজ্ঞদের তীক্ষ্ণ প্রতিক্রিয়া এই পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করতে পারে। চীন, যা বর্তমানে ভারতের সাথে সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে চায়, ইউনূসের বক্তব্যকে সমর্থন না করে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি কূটনৈতিক পেছন পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।