ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫: ২ এপ্রিলে লোকসভায় পেশ, বিতর্কের ছায়া

ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫: ২ এপ্রিলে লোকসভায় পেশ, বিতর্কের ছায়া

ভারতীয় সংসদের বর্তমান বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনী পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওয়াকফ (সংশোধন) বিল, ২০২৫ বুধবার (২ এপ্রিল, ২০৫৫) লোকসভায় পেশ হবে, এই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বিলটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার নিয়মাবলী পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্য রাখে, যা বিতর্ক ও আপত্তির মধ্যে ঘেরা রয়েছে। বিজেপি ও কংগ্রেস উভয়ই ২ এবং ৩ এপ্রিলের জন্য তাদের সাংসদদের জন্য হুইপ জারি করেছে, যা এই বিলের উপর তীব্র আলোচনা ও ভোটাভূত প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়।

বিলের প্রধান বৈশিষ্ট্য: ২০২৫ পূর্বের সম্পত্তি ওয়াকফেই থাকবে
রিজিজু মঙ্গলবার (১ এপ্রিল, ২০৫৫) জানান যে বিলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে ২০২৫ সালের আগে ওয়াকফের অধীনে থাকা সম্পত্তিগুলো ভবিষ্যতেও ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে বজায় থাকবে, যদি না তাদের উপর কোনও বিতর্ক থাকে। এই সিদ্ধান্ত বর্তমান ওয়াকফ সম্পত্তির স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে, তবে বিতর্কিত সম্পত্তির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রয়োগ করা হবে। সূত্রের হিসেবে, বিলে আরও বলা হয়েছে যে ওয়াকফ দানকারীদের জন্য একটি নতুন শর্ত চালু হবে: তাদের কমপক্ষে ৫ বছর ধরে ইসলাম পালন করা প্রমাণ করতে হবে, যা জোর করে ধর্মান্তরিত করে জমি দখলের ঘটনা রোধ করার লক্ষ্য রাখে।

ব্যবহারকারীর ওয়াকফ: বিতর্কের মূল পয়েন্ট
বিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো “ওয়াকফ বাই ইউজার” (ব্যবহারকারীর ওয়াকফ) সম্পর্কিত নিয়মের পরিবর্তন। বর্তমান আইনে, যে সম্পত্তি দীর্ঘকাল ধরে ওয়াকফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তা ওয়াকফ হিসেবে স্বীকৃত হয়, যদিও তার কোনও দলিল না থাকে। বিলে এই ধারণাকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে, যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। একটি উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়েছে যে, যদি কেউ ১০০ বছর আগে একটি সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে দান করে, কিন্তু তার দলিল নেই, তবে সরকার কি সেই সম্পত্তির দখল নেবে নাকি নতুন মামলা শুরু করবে? সূত্রের হিসেবে, এই পরিবর্তন কেবল বিতর্কিত সম্পত্তির জন্য, যা ইতিমধ্যেই বিরোধের মুখে রয়েছে।

জেডিইউ, এনডিএর একটি মিত্র, পরামর্শ দিয়েছে যে বর্তমান পুরাতন মসজিদ, দরগা, বা অন্যান্য মুসলিম ধর্মীয় স্থানগুলো নষ্ট করা উচিত নয়, এবং সরকার এই পরামর্শ গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপ মুসলিম সম্প্রদায়ের সংরক্ষিত সম্পত্তির প্রতি শ্রদ্ধা রক্ষার লক্ষ্য রাখে।

বিরোধীদের প্রতিবাদ: সংবিধানের বিরুদ্ধতা?
বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দল, বিলকে “অসংবিধানিক” এবং “সংখ্যালঘু-বিরোধী” হিসেবে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি হলো, এই বিল মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার এবং ওয়াকফ সম্পত্তির স্বাধীনতা হরণ করবে। তবে, রিজিজু বলেন, “আমরা সাংসদদের পরিবর্তনগুলি নিয়ে বিতর্ক করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে চাই। প্রশ্নোত্তর পর্বের পর এবং আলোচনার জন্য আট ঘন্টা সময় বরাদ্দ করা হবে।” তিনি আরও জানান যে স্পিকার ওম বিড়লার বিবেচনায় সময় বাড়ানো যেতে পারে, যা বিলের উপর তীব্র আলোচনার ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্লেষণ: সংশোধনের লক্ষ্য ও প্রভাব
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের লক্ষ্য হলো ওয়াকফ সম্পত্তির পরিচালনা, নিবন্ধকরণ, এবং বিতর্কিত সম্পত্তির সমাধানে আরও স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনা। তবে, “ওয়াকফ বাই ইউজার” বাতিল করার সিদ্ধান্ত এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের ওয়াকফ দানের জন্য ৫ বছরের শর্ত মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই বিল মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্ন তুলছে, যা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির বিরুদ্ধ হতে পারে।” তবে, সরকারের দাবি হলো এটি ভ্রষ্টাচার, অবৈধ দখল, এবং অকার্যকর পরিচালনা রোধ করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *