আমেরিকার নতুন শুল্ক যুদ্ধ: ২ এপ্রিল থেকে ভারতসহ বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ, ট্রাম্পের ‘কাগজ’ উড়িয়ে হুমকি

আমেরিকার নতুন শুল্ক যুদ্ধ: ২ এপ্রিল থেকে ভারতসহ বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ, ট্রাম্পের ‘কাগজ’ উড়িয়ে হুমকি

ওয়াশিংটন ডি.সি.: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা আগামীকাল, ২ এপ্রিল থেকে বিশ্বের বহু দেশ, সহ ভারত, উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা জারি করছে, যা গ্লোবাল বাণিজ্যে একটি বড় অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। মঙ্গলবার, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট একটি সংবাদ সম্মেলনে একটি কাগজ তুলে ধরে দাবি করেছেন যে বিভিন্ন দেশ, যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ভারত, এবং কানাডা, আমেরিকান পণ্যের উপর আসামান শুল্ক আরোপ করে “দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকাকে লুট” করছে। এই “কাগজ” একটি শুল্ক তালিকা, যা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি অসহায়ত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ট্রাম্পের ‘মুক্তি দিবস’ ঘোষণা: শুল্ক যুদ্ধের শুরু
ট্রাম্প এই শুল্ক পরিবর্তনকে “মুক্তি দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যা তাদের মতে, আমেরিকান শ্রমিকদের জন্য ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্য নিশ্চিত করবে। তিনি বারবার দাবি করেছেন যে ভারত আমেরিকান কৃষি পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা আমেরিকান ব্যবসায় এবং চাকরির উপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলেছে। লেভিট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অন্যায় বাণিজ্য প্রথা বন্ধ করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক। এখন পারস্পরিক সহযোগিতার সময়।” তিনি হাতে একটি কাগজ তুলে ধরে আরও বলেন, “এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকাকে লুট করে আসছে, এবং এতে আমেরিকান শ্রমিকদের প্রতি তাদের ঘৃণা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।”

শুল্ক তালিকা: কোন দেশ কত শুল্ক আরোপ করছে?
লেভিটের হাতে থাকা কাগজে বিস্তারিত শুল্ক তথ্য ছিল, যা নিম্নরূপ:

  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন: আমেরিকান দুগ্ধজাত পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক।
  • জাপান: আমেরিকান চালের উপর ৭০০ শতাংশ শুল্ক।
  • ভারত: আমেরিকান কৃষি পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক।
  • কানাডা: আমেরিকান পনিরের উপর ৩০০ শতাংশ শুল্ক।

এই তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকান পণ্যের আমদানি অন্যান্য দেশে প্রায় আসাম্ভব হয়ে পড়েছে, যা আমেরিকান ব্যবসায় ও চাকরির জন্য বড় হুমকি।

ভারতের প্রতিক্রিয়া: চ্যালেঞ্জের মুখে
ভারত, যা ট্রাম্পের শুল্ক তালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট, এখনও এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, ভারতীয় বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “আমেরিকার এই পদক্ষেপ ভারতীয় রপ্তানি ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের শুল্ক নীতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত হতে পারে, কিন্তু স্থানীয় শিল্প রক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ।” ভারতের জন্য এটি একটি দ্বিধা, যেখানে স্বাধীন বাণিজ্য নীতি এবং আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

বিশ্লেষণ: গ্লোবাল ট্রেডে নতুন যুদ্ধ?
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) এবং অন্যান্য দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। এই পদক্ষেপ ইউরোপ, এশিয়া, এবং উত্তর আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক যুদ্ধ শুরু করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “আমেরিকার এই ‘কাগজ’ একটি রাজনৈতিক স্টান্ট হতে পারে, কিন্তু এটি গ্লোবাল অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।” তবে, কিছু দেশ ইতিমধ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *