প্রিয়াংশের ব্যাটে স্বপ্নের ঘর: আইপিএল তারকার উত্থান

আইপিএল ২০২৫-এ দিল্লির তরুণ ক্রিকেটার প্রিয়াংশ আর্যের অভিষেক ম্যাচ শুধু পাঞ্জাব কিংসের জন্য জয়ই এনে দেয়নি, বরং একটি পরিবারের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের পথও খুলে দিয়েছে। গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে মাত্র ২৩ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে প্রিয়াংশ প্রমাণ করেছেন, তিনি কেবল মাঠের তারকা নন, জীবনের মাঠেও বড় সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। এই তরুণ তারকা এখন তার বাবা-মায়ের জন্য একটি বাড়ি কিনতে চলেছেন, যারা এতদিন দিল্লির ভাড়া বাড়িতে জীবন কাটিয়েছেন।
অভিষেকে ঝড়, জীবনে বিপ্লব
প্রিয়াংশ আর্যের আইপিএল যাত্রা শুরু হয়েছে গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে একটি বিস্ফোরক পারফরম্যান্স দিয়ে। তার ৪৭ রানের ইনিংস পাঞ্জাব কিংসকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয় এনে দেয়। তবে মাঠের এই সাফল্যের বাইরে প্রিয়াংশের পরিকল্পনা আরও বড়। আইপিএল ২০২৫ নিলামে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় কেনা এই খেলোয়াড় বলেছেন, “এখন আমি আমার বাবার জন্য একটি বাড়ি কিনব।” এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তিনি এক নিমেষে পরিবারের দারিদ্র্যের বোঝা থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
প্রিয়াংশের বাবা-মা দুজনেই সরকারি স্কুলের শিক্ষক। তাদের আয় সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট হলেও নিজস্ব বাড়ির স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল। প্রিয়াংশের বাবা পবন আর্য বলেন, “গত বছরই ও আমাকে বলেছিল, ‘পাপা, এবার আইপিএল কন্ট্রাক্ট পেলে আপনারা রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নিন।’ আজ ওর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের পথে।”
দিল্লি থেকে আইপিএল: এক উজ্জ্বল যাত্রা
প্রিয়াংশের নামটি দিল্লির ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত হলেও, তিনি জাতীয় মঞ্চে আলোচনায় আসেন দিল্লি প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) ২০২৪-এর মাধ্যমে। সাউথ দিল্লি সুপারস্টার্সের হয়ে খেলতে গিয়ে তিনি মাত্র ৮ ইনিংসে ৫৭৬ রান করেন, যার মধ্যে ছিল দুটি সেঞ্চুরি। উত্তর দিল্লি স্ট্রাইকার্সের বিরুদ্ধে এক ওভারে ৬টি ছক্কা মেরে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই পারফরম্যান্সই তাকে আইপিএল নিলামে পাঞ্জাব কিংসের ৩.৮ কোটি টাকার চুক্তি এনে দেয়।
তার কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজ, যিনি গৌতম গম্ভীরের মতো তারকাকেও গড়ে তুলেছেন, প্রিয়াংশের প্রতিভার প্রশংসা করে বলেন, “ওর মধ্যে স্বাভাবিক আক্রমণাত্মকতা আছে। আমি ওকে কখনো উড়ন্ত শট থেকে বিরত করিনি। ওর শক্তি ওর সাহসে, আর সেটাই ওকে এতদূর এনেছে।”
আর্থিক স্বাধীনতা থেকে সামাজিক প্রভাব
আইপিএলের এই বিপুল অর্থ প্রিয়াংশের জীবনে শুধু বিলাসিতা আনছে না, বরং তার পরিবারের জন্য স্থিতিশীলতার ভিত গড়ে দিচ্ছে। দিল্লির অশোক বিহারে ভাড়া বাড়িতে বড় হওয়া এই তরুণ এখন তার বাবা-মায়ের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানার পরিকল্পনা করছেন। এছাড়াও, তিনি পড়াশোনায়ও পিছিয়ে পড়েননি। স্বামী শ্রদ্ধানন্দ কলেজ থেকে ৬৭% নম্বর নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা প্রিয়াংশ বর্তমানে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করছেন।
তার বাবা পবন গর্বের সঙ্গে বলেন, “আমি জানি না ও গত ম্যাচে কত ছক্কা মেরেছে, কিন্তু ওর পড়াশোনার নম্বর আমার মুখস্থ। ও কঠোর পরিশ্রমী, আর এখন ওর সাফল্য আমাদের জীবন বদলে দিচ্ছে।”
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ: লখন�;/উ ম্যাচ
প্রিয়াংশের পরবর্তী পরীক্ষা আসছে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে। গুজরাটের বিরুদ্ধে তার বিস্ফোরক ব্যাটিং ইতিমধ্যেই প্রতিপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছে। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার আক্রমণাত্মক স্টাইল পাওয়ারপ্লেতে পাঞ্জাব কিংসের জন্য গেম-চেঞ্জার হতে পারে। তবে লখনউয়ের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে তাকে আরও পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
একটি তারকার উত্থান
প্রিয়াংশ আর্যের গল্প কেবল ক্রিকেটের সাফল্য নয়, এটি পরিশ্রম, স্বপ্ন এবং পারিবারিক দায়িত্বের একটি জীবন্ত উদাহরণ। দিল্লির ভাড়া বাড়ি থেকে আইপিএলের উজ্জ্বল আলোয়, তার যাত্রা অনুপ্রেরণা জোগায়। এখন সবার চোখ তার পরবর্তী পারফরম্যান্সের দিকে। লখনউ ম্যাচে তার ব্যাট কী গর্জন তুলবে, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে—সেটাই দেখার বিষয়। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, প্রিয়াংশ শুধু মাঠে নয়, জীবনেও জিততে এসেছেন।