তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়া: গ্রহদের ষড়যন্ত্রে বিশ্ব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে?

বিশ্ব কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে? ব্রাজিলের বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা অ্যাথোস সালোমে, যিনি ‘জীবন্ত নস্ট্রাডামাস’ নামে পরিচিত, এমনই এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা জারি করেছেন। তাঁর দাবি, বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ এবং সাম্প্রতিক নাশকতার ঘটনাগুলি একটি ধ্বংসাত্মক সংঘাতের দিকে ইঙ্গিত করছে, যা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিকেও ম্লান করে দেবে।
হাইব্রিড যুদ্ধের নতুন যুগ
৩৮ বছর বয়সী এই মনোবিজ্ঞানী ও ভবিষ্যদ্বক্তা ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এবার তিনি বলছেন, আসন্ন সংঘাত কোনও প্রচলিত যুদ্ধ হবে না। “এটি হবে হাইব্রিড যুদ্ধ এবং অন্তর্ঘাতের মিশ্রণ,” বলেন সালোমে। তিনি বাল্টিক সাগরে লাটভিয়া ও সুইডেনের মধ্যে সমুদ্রতলের অপটিক্যাল ফাইবার কেবল ক্ষতির ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, “এই ছোট ঘটনাগুলিই বড় শক্তির অন্ধকার পরিকল্পনার সূচনা হতে পারে।”
গত বছর ফিনল্যান্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থায় কেবল নেটওয়ার্ক ব্যর্থতার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি যোগ করেন, “বাল্টিক অঞ্চলে একটি অঘোষিত যুদ্ধ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।” জ্যোতিষ ও ঐতিহাসিক প্রবণতার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সালোমে দাবি করেন, এই ঘটনাগুলি একটি বৃহৎ কৌশলগত প্যাটার্নের অংশ।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
সালোমে ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বড় যুদ্ধ প্রায়ই অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে শুরু হয়। “প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটি হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পোল্যান্ড আক্রমণের মাধ্যমে। এবারও তেমনই কিছু ঘটতে পারে,” তিনি সতর্ক করেন। তাঁর মতে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এই সংঘাতের প্রধান ট্রিগার হতে পারে।
“আমরা এখন এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে একটি ইন্টারনেট কেবলের ক্ষতি সামরিক আক্রমণের মতোই মারাত্মক হতে পারে,” বলেন সালোমে। তিনি বাল্টিক অঞ্চলের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলিকে ‘ইচ্ছাকৃত নাশকতা’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশ্ন তোলেন, “বিশ্ব শক্তিগুলো এর জবাবে কী করবে? ন্যাটো এবং রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কি এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে?”
বিশ্লেষণ: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই সতর্কবার্তা?
সালোমের ভবিষ্যদ্বাণী শুধু কল্পনা নয়, বরং বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি প্রতিফলন। বাল্টিক সাগরে সমুদ্রতলের কেবল ক্ষতির ঘটনাকে অনেক বিশ্লেষক রাশিয়ার হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, সালোমের উল্লেখিত ‘অন্ধকার শক্তি’ রাশিয়া বা অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির ইঙ্গিত হতে পারে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরোধমূলক অবস্থান বিশ্বকে একটি নতুন শীতল যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অঞ্চলে যেকোনো ছোট ঘটনা—যেমন নৌসংঘর্ষ বা সামরিক মহড়া—বড় সংঘাতের সূত্রপাত করতে পারে।
সমুদ্রতলের কেবল: আধুনিক যুদ্ধের নতুন হাতিয়ার
সালোমে সমুদ্রতলের যোগাযোগ কেবলগুলোকে আধুনিক বিশ্বের ‘জীবনরেখা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, এগুলোর ক্ষতি কেবল সামরিক ক্ষমতাই নয়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও বিপর্যস্ত করতে পারে। বিশ্বের ৯৫ শতাংশ ইন্টারনেট ডেটা এই কেবলগুলোর মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। বাল্টিক অঞ্চলে সাম্প্রতিক কেবল ক্ষতির ঘটনায় ন্যাটোর সতর্কতা এবং রাশিয়ার প্রত্যাখ্যান এই উদ্বেগকে আরও জোরালো করেছে।
একজন ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “যদি এই ক্ষতিগুলো ইচ্ছাকৃত হয়, তবে এটি হাইব্রিড যুদ্ধের একটি নতুন মাত্রা। এর প্রতিক্রিয়ায় ন্যাটোর পদক্ষেপ রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।”