নয়াদিল্লি, ২ এপ্রিল ২০২৫: ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প বিশ্ব মঞ্চে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে আরেকটি মাইলফলক স্থাপন করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ২৩,৬২২ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করে রেকর্ড গড়েছে। ৮০টিরও বেশি দেশে ভারতীয় অস্ত্রের গুণমান এখন স্বীকৃতি পাচ্ছে, যা দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক অগ্রগতির সাক্ষ্য বহন করছে।

রেকর্ড বৃদ্ধি: কতটা এগিয়েছে ভারত?

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রতিরক্ষা রপ্তানি গত বছরের ২১,০৮৩ কোটি টাকার তুলনায় ১২ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সাফল্যের পিছনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য। সরকারি খাত (DPSU) এই বছর ৮,৩৮৯ কোটি টাকার রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের ৫,৮৭৪ কোটি টাকার তুলনায় ৪২.৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি। অন্যদিকে, বেসরকারি খাত ১৫,২৩৩ কোটি টাকার অবদান রেখেছে। মোট রপ্তানিকারকের সংখ্যাও ১৭.৪ শতাংশ বেড়েছে, যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী ভারতীয় পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা এবং গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের অংশ হওয়ার ক্ষমতার প্রমাণ।”

কারা ভারতের অস্ত্র কিনছে?

ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এখন ৮০টিরও বেশি দেশে পৌঁছেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং আর্মেনিয়ার মতো দেশগুলো শীর্ষ ক্রেতা। ভারতীয় অস্ত্রের তালিকায় রয়েছে আর্টিলারি গান, মিসাইল সিস্টেম, হালকা যুদ্ধবিমান এবং গোলাবারুদ। এই বৈচিত্র্য এবং গুণমানই ভারতকে বিশ্ব বাজারে আলাদা করে তুলেছে।

সরকারি নীতি: সাফল্যের মূল চাবিকাঠি

এই অগ্রগতির পিছনে রয়েছে সরকারের নীতিগত সংস্কার। লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সরলীকরণ, মধ্যস্থতাকারীদের অপসারণ এবং রপ্তানি অনুমোদন সহজ করার মতো পদক্ষেপ শিল্পকে গতি দিয়েছে। এছাড়া, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) ৪৯ শতাংশ থেকে ৭৪ শতাংশে উন্নীত করা এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞার মতো উদ্যোগ দেশীয় উৎপাদনকে শক্তিশালী করেছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “আমরা আমদানি-নির্ভরতা থেকে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে গেছি। ২০২৯ সালের মধ্যে ৫০,০০০ কোটি টাকার রপ্তানি লক্ষ্য আমাদের দৃষ্টিপথে রয়েছে।”

বিশ্লেষণ: ভারতের অবস্থান কোথায়?

এক দশক আগে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ছিল মাত্র ৬৮৬ কোটি টাকা (২০১৩-১৪)। আজকের ২৩,৬২২ কোটি টাকা সেই যাত্রার একটি বড় পদক্ষেপ। তবে, বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারকদের তুলনায় ভারত এখনও পিছিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছে। ভারতের এই বছরের রপ্তানি তার তুলনায় অনেক কম হলেও, প্রবৃদ্ধির ধারা আশাব্যঞ্জক।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল ভট্টাচার্য বলেন, “ভারতের শক্তি তার সাশ্রয়ী মূল্য এবং নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তিতে। তবে, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আরও উদ্ভাবন প্রয়োজন।”