‘চোখের বদলে চোখ’: ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে কাঁপছে বিশ্ব, ভারতের বাজারে আতঙ্ক

আমেরিকার ‘চোখের বদলে চোখ’ শুল্কনীতি আজ থেকে কার্যকর হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই প্রতিশোধমূলক শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় শেয়ার বাজারে এর প্রভাব স্পষ্ট—মঙ্গলবার সেনসেক্স ১৪০০ পয়েন্ট এবং নিফটি ৩৫৩ পয়েন্ট ধসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
শুল্কযুদ্ধের প্রথম ধাক্কা
হোয়াইট হাউস মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, ট্রাম্পের ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা প্রতিশোধমূলক শুল্ক পরিকল্পনা বুধবার রাত থেকে বা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কার্যকর হবে। এই নীতির মূল ভিত্তি হলো—যে দেশগুলো আমেরিকান পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে, তাদের পণ্যের ওপর আমেরিকাও সমান শুল্ক বসাবে। ট্রাম্প এই দিনটিকে ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “ভারতসহ অনেক দেশ আমাদের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর বসিয়েছে। এবার আমরা সমতা আনব।”
এর প্রভাবে ভারতীয় বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ফার্মা, অটোমোবাইল এবং আইটি—যেসব খাত আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল, সেগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত, কারণ এই শুল্ক ভারতের ৬৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির ৮৭ শতাংশকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত সরকার সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় একটি ‘নিরাপত্তা ঢাল’ তৈরির কথা জানিয়েছে। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক হ্রাসের চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে ভারত আমেরিকার ২৩ বিলিয়ন ডলারের আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়াল সংসদীয় কমিটির কাছে বলেন, “জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না।”
হোয়াইট হাউসের কঠোর অবস্থান
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট মঙ্গলবার বলেন, “আমরা আমেরিকান কর্মীদের জন্য সর্বোত্তম চুক্তি চাই। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরও বিস্তারিত জানানো হবে।” তিনি ইঙ্গিত দেন, যেসব দেশ শুল্ক কমাতে রাজি, তাদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। তবে, ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—কঠোর শুল্কের মাধ্যমে বাণিজ্য ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। আজ বিকেল ৪টায় (স্থানীয় সময়) রোজ গার্ডেনে তিনি এই শুল্কনীতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন।
বাজারে অস্থিরতা, বিশ্বে উত্তেজনা
ভারতীয় বাজারে মঙ্গলবারের পতন শুধু শুরু হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, এই শুল্ক বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনকে বিপর্যস্ত করতে পারে। চীন, কানাডা এবং মেক্সিকোর ওপর ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়েছে। এবার ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় বাণিজ্য অংশীদাররাও এর আওতায় এসেছে। প্রতিশোধমূলক শুল্কের আশঙ্কায় বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়ছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক রাকেশ শর্মা বলেন, “এই শুল্ক ভারতের রপ্তানি-নির্ভর শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা। তবে, ভারত যদি বিকল্প বাজার যেমন আসিয়ান বা আফ্রিকায় মনোযোগ দেয়, তাহলে ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।”
ভারতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
এই শুল্কের প্রভাব শুধু বাজারে সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের গাড়ি শিল্পে খরচ বাড়তে পারে, কারণ আমেরিকা থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধি পাবে। ফার্মা খাতেও চাপ বাড়বে, যেহেতু আমেরিকা এর বড় বাজার। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এটি ভারতের জন্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে আরও জোরদার করার সুযোগ হতে পারে।
এরপর কী?
আমেরিকার এই পদক্ষেপ ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন পরীক্ষা। সরকারের কৌশল এবং আলোচনার ফলাফল এখন গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি। বিশ্ব অর্থনীতিতে এই শুল্কযুদ্ধের ধাক্কা কতটা গভীর হবে, তা সময়ই বলবে। তবে, একটি বিষয় স্পষ্ট—ট্রাম্পের ‘মুক্তি দিবস’ বিশ্বের জন্য অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।