মহাদেব বেটিং কেলেঙ্কারি: ভূপেশ বাঘেলের বিরুদ্ধে সিবিআই-এর এফআইআর, তদন্তে নতুন মোড়

মহাদেব বেটিং অ্যাপ মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, যেখানে তাকে ৬ নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই মামলায় মোট ২১ জনের নাম উঠে এসেছে, যার মধ্যে বেটিং অ্যাপের প্রোমোটার সৌরভ চন্দ্রকর এবং রবি উৎপলও রয়েছেন। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে।
এফআইআর ও অভিযান: কী ঘটছে?
সিবিআই সম্প্রতি দেশজুড়ে ৬০টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে, যার মধ্যে বাঘেলের বাসভবনও রয়েছে। ছত্তিশগড়, ভোপাল, কলকাতা এবং দিল্লিতে চালানো এই অভিযানে রাজনীতিবিদ, আমলা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, মহাদেব বুক নামে এই অনলাইন বেটিং প্ল্যাটফর্ম থেকে অবৈধভাবে প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। অভিযানে ডিজিটাল রেকর্ড এবং আর্থিক লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়েছে, যা তদন্তে নতুন দিশা দিতে পারে।
‘সুরক্ষার অর্থ’ অভিযোগের কেন্দ্রে
সিবিআই-এর তদন্তে উঠে এসেছে, দুবাই-ভিত্তিক প্রোমোটার সৌরভ চন্দ্রকর এবং রবি উৎপল মহাদেব অ্যাপের আয়ের একটি বড় অংশ ছত্তিশগড়ের পুলিশ কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের ‘সুরক্ষার অর্থ’ হিসেবে দিতেন। এই অর্থের বিনিময়ে তাদের অবৈধ বেটিং নেটওয়ার্ককে আইনি পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করা হতো। বাঘেলের নাম এই অভিযোগের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়েছে।
তদন্তের যাত্রা: EOW থেকে সিবিআই
মামলাটি প্রথমে ছত্তিশগড়ের অর্থনৈতিক অপরাধ তদন্ত শাখা (EOW) তদন্ত করছিল। ২০২৪ সালের মার্চে EOW-এর এফআইআরে বাঘেলের নাম উঠে আসে। পরে, রাজ্য সরকার এই মামলা সিবিআই-এর হাতে তুলে দেয়, যাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা যায়। সিবিআই এই মামলায় ৭৭টি এফআইআর পর্যালোচনা করে নিজস্ব তদন্ত শুরু করেছে।
বাঘেলের প্রতিক্রিয়া
এফআইআর প্রকাশ্যে আসার পর বাঘেল বলেন, “আমি এখনও সিবিআই-এর এফআইআর সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। বিষয়টি জানার পরই প্রতিক্রিয়া জানাব।” তিনি এর আগে অভিযানের সময় দাবি করেছিলেন, তাঁর সরকারই মহাদেব অ্যাপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। “আমার নির্দেশে ৭৪টি এফআইআর দায়ের হয়েছিল, ২০০-র বেশি গ্রেপ্তার এবং ২,০০০-এর বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছিল,” বলে তিনি জানান। তিনি এই তদন্তকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিশ্লেষণ: কেন গুরুত্বপূর্ণ এই মামলা?
মহাদেব বেটিং কেলেঙ্কারি ভারতের বৃহত্তম অনলাইন বেটিং কেলেঙ্কারিগুলির মধ্যে একটি। এই অ্যাপ ক্রীড়া ইভেন্ট, কার্ড গেম এবং এমনকি নির্বাচনের উপর বাজি ধরার সুযোগ দিত। তদন্তে প্রকাশ, এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। বাঘেলের মতো একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়ানো এই মামলাকে রাজনৈতিক ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই তদন্ত কেবল আর্থিক দুর্নীতির মাত্রা উন্মোচন করবে না, বরং রাজ্যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরে দুর্নীতির গভীরতাও প্রকাশ করতে পারে। তবে, বাঘেলের দাবি সত্যি হলে—যে তিনি অ্যাপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন—তদন্তে নতুন প্রশ্ন উঠতে পারে।
এরপর কী?
সিবিআই-এর হাতে জব্দ নথি এবং ডিজিটাল প্রমাণ এখন বিশ্লেষণের অপেক্ষায়। তদন্তকারী সংস্থা শীঘ্রই আরও তথ্য প্রকাশ করতে পারে। এদিকে, সৌরভ চন্দ্রকর এবং রবি উৎপলের প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চলছে, যা মামলার গতি বাড়াতে পারে। এই ঘটনা ছত্তিশগড়ের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে, সেটা নিশ্চিত।
মহাদেব বেটিং মামলা এখন কেবল একটি আর্থিক কেলেঙ্কারি নয়, এটি ক্ষমতা, দুর্নীতি এবং রাজনীতির এক জটিল খেলা। তদন্তের পরবর্তী ধাপে কী উঠে আসে, সেদিকে নজর রাখছে গোটা দেশ।