ওয়াকফ বিল: লোকসভায় আজ তুমুল আলোচনা, বিজেপির হুইপ

ওয়াকফ বিল: লোকসভায় আজ তুমুল আলোচনা, বিজেপির হুইপ

আজ লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ৮ ঘণ্টার তীব্র আলোচনার মধ্য দিয়ে এই বিলের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বুধবার সকালে বিলটি উত্থাপন করবেন। বিজেপি ইতিমধ্যে দলীয় সাংসদদের জন্য হুইপ জারি করেছে, যাতে তারা পুরো সময় উপস্থিত থেকে সরকারকে সমর্থন দেয়। তবে বিরোধী দলগুলোর তীব্র প্রতিবাদের আভাসে সংসদে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

আলোচনার মঞ্চ তৈরি

কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন, “আমরা আলোচনা চাই। প্রতিটি দলের মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। দেশ জানতে চায়, কে এই বিল সমর্থন করছে, কে বিরোধিতা করছে—এটা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “যদি হাউস মনে করে আলোচনার সময় বাড়ানো দরকার, তবে তা বাড়ানো যাবে। কিন্তু বিরোধীরা অজুহাত দেখিয়ে আলোচনা এড়ালে আমি তা থামাতে পারব না।” বাজেট অধিবেশন ৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে, এবং প্রশ্নোত্তর পর্বের পরই বিলটি বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত হবে।

বিজেপির কঠোর নির্দেশ

বিজেপির চিফ হুইপ ড. সঞ্জয় জয়সওয়াল সাংসদদের উদ্দেশে চিঠিতে লিখেছেন, “২ এপ্রিল গুরুত্বপূর্ণ আইনসভা কাজের জন্য নির্ধারিত। সকল সাংসদকে পুরো সময় উপস্থিত থেকে সরকারকে সমর্থন করার অনুরোধ করা হচ্ছে।” এই হুইপ বিল পাসে দলের দৃঢ় অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

বিরোধীদের কড়া প্রতিক্রিয়া

AIMIM প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বিলের তীব্র বিরোধিতার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার দল বিতর্কে অংশ নেবে, সংশোধনী আনবে। আমরা প্রমাণ করব, এই বিল সাংবিধানিক নয়। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও দান-খয়রাতের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে।” তিনি NDA-র শরিক দলগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশ কুমার, চিরাগ পাসওয়ান, জয়ন্ত চৌধুরী এটা বুঝছেন না। জনগণ তাদের বোঝাবে।”

বিজেপির দাবি: ধর্মনিরপেক্ষ বিল

বিজেপি নেতা নিশিকান্ত দুবে বিলটিকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “এর সঙ্গে হিন্দু, মুসলিম, শিখ বা খ্রিস্টানদের কোনও সম্পর্ক নেই। কংগ্রেস ভোট ব্যাংকের জন্য মুসলমানদের বিভ্রান্ত করত। জেপিসির ৬০টি বৈঠক হয়েছে, সময় নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। বিরোধীরা শুধু রাজনীতি করতে চায়।” তিনি বিলটিকে “ভালো” আখ্যা দিয়ে পাসের পক্ষে সওয়াল করেন।

বিতর্কের কেন্দ্রে কী?

ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪-এ ৪৪টি সংশোধনী প্রস্তাবিত হয়েছে, যার মধ্যে ওয়াকফ সম্পত্তির সংজ্ঞা, বোর্ডের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন রয়েছে। বিরোধীরা দাবি করছে, এটি ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। অন্যদিকে, সরকার বলছে, এটি স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াবে।

বিশ্লেষণ: রাজনৈতিক মেরুকরণের আশঙ্কা

এই বিল নিয়ে লোকসভায় তীব্র মতবিরোধের সম্ভাবনা। বিজেপির শরিক দলগুলোর সমর্থন থাকলেও, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ এটিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের ওপর আঘাত বলে প্রচার করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা ধর্মীয় মেরুকরণের নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বিল পাস হলে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *