মার্কিন সিনেটে ইতিহাস রচনা: ২৫ ঘন্টা ভাষণে ট্রাম্পের তীক্ষ্ণ সমালোচনা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর কোরি বুকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২৫ ঘন্টা ৫ মিনিট ধরে একটানা ভাষণ দিয়ে সিনেটের ইতিহাসে দীর্ঘতম বক্তৃতার নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন। এই ম্যারাথন ভাষণে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলোর বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ সমালোচনা করেছেন এবং দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর পড়া ঝুঁকি হাইলাইট করেছেন।
রেকর্ড ভাঙা ভাষণ: কী বললেন বুকার?
বুকারের ভাষণ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় (ইস্টার্ন টাইম) শুরু হয় এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। এই সময়ে তিনি দাঁড়িয়েই বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যা ১৯৫৭ সালে সিনেটর স্ট্রম থারমন্ডের ২৪ ঘন্টা ১৮ মিনিটের পূর্ববর্তী রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। বুকারের উদ্দেশ্য ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং আমেরিকান জনগণের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছানো। তিনি বলেন, “আমি আজ রাতে দাঁড়িয়েছি কারণ আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি আমাদের দেশ সংকটে আছে। মাত্র ৭১ দিনে, রাষ্ট্রপতি আমেরিকানদের নিরাপত্তা, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।”
তিনি হোয়াইট হাউসের গৃহীত পদক্ষেপ—যেমন বিদেশি সাহায্য কমানো, আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে দূরত্ব সৃষ্টি, এবং রাশিয়া ও চীনের প্রভাব বাড়ার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বুকারের ভাষণ শেষে, তিনি মন্তব্য করেন, “আমি ক্লান্ত এবং একটু ক্ষরার্গ্রস্ত হতে পারি, কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমাদের বলতে হবে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: ডেমোক্র্যাটদের প্রতিবাদ
ওয়াশিংটনে ক্ষমতার বাইরে থাকা ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সংগ্রাম করছে। বুকারের এই ভাষণ তাদের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সিনেট ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের একজন সদস্য হিসেবে, বুকার ভোটারদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে এই বক্তৃতা দিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভাষণ মাত্র একটি প্রতিবাদ নয়, বরং ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটি নতুন কৌশল গঠন করার চেষ্টা করছে।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
বুকারের ভাষণ বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। রিপাবলিকানদের একজন নেতা মন্তব্য করেছেন, “এটি নাটকীয় প্রদর্শনের চেয়ে বেশি কিছু নয়।” তবে, ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা এটিকে “গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার জন্য একটি নায়কত্বমূলক পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছেন। সামাজিক মাধ্যমে পোস্টগুলো দেখা যাচ্ছে যে, অনেকে বুকারের স্থিরতা ও দৃঢ়তাকে প্রশংসা করছেন, যদিও কিছু ব্যক্তি এটিকে অপ্রয়োজনীয় প্রতিবাদ বলে অভিযোগ করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ভাষণ ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, বিশেষ করে যখন রিপাবলিকানরা সেনেট ও হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখছে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “বুকারের এই কদম আগামী দিনে ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে, যা তাদের ভোটার বেসকে জোরদার করবে।”
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ভাষণ?
৫৫ বছর বয়সী বুকারের এই ভাষণ মার্কিন রাজনীতিতে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তিনি ন केवल ট্রাম্পের নীতিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, বরং আমেরিকার গণতান্ত্রিক প্রথাগুলোর জন্য একটি সতর্কবাণীও জারি করেছেন। তাঁর ভাষণের প্রভাব কতদূর গভীর হবে, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ঘটনাবলী নির্ধারণ করবে।