হৃদয় ও বিশ্বাস ছাড়া ধর্মান্তরণ অবৈধ: এলাহাবাদ হাইকোর্টের কঠোর রায়

ধর্মান্তরণ কেবল সত্যিকারের হৃদয় ও বিশ্বাসের পরিবর্তনের মাধ্যমেই সম্ভব—এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি বৃহৎ বিতর্কের মূলে দাঁড়িয়েছে। প্রতারণা, চাপ বা বিয়ের প্রলোভনে ধর্মান্তরিত করা বেআইনি এবং গুরুতর অপরাধ—এই রায়ে হাইকোর্ট একটি গভীর সমাজীয় ও নৈতিক প্রশ্ন তুলে ধরেছে। বিচারপতি মঞ্জু রানী চৌহানের বেঞ্চ এই রায়ে জোর দিয়েছেন যে, ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হৃদয়ে পবিত্র বিশ্বাস এবং নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর নীতিমালার প্রতি আন্তরিকতা অপরিহার্য।
ধর্মান্তরণের আইনি ও নৈতিক মাপকাঠি
হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “সত্যিকারের হৃদয়ে আল্লাহকে অন্তরে রাখা এবং নবী মোহাম্মদ সাহেবের প্রতি বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য। তাঁর নীতিগুলো সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে অনুসরণ করতে হবে।” এই বিশ্লেষণে আদালত জোর দিয়েছে যে, ধর্মান্তরণ কখনোই বিয়ের মতো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা চাপের কারণে হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে, রায়ে ধর্ষণ ও প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মান্তরণকে “জীবনের মর্যাদাপূর্ণ নিঃশ্বাসকে দমন করা” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আদালত আরও বলেছে, “একজন নারীর শরীর তার মন্দির এবং তার পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে কোনো কারণেই লঙ্ঘন করা যাবে না।” এই মন্তব্য রায়ের একটি শক্তিশালী অংশ, যা নারীদের সুরক্ষা ও সম্মানের প্রতি আদালতের দৃষ্টিকোণ প্রকাশ করে।
রামপুর মামলার পটভূমি
এই রায় রামপুরের সোয়ার থানা এলাকার একটি সংবেদনশীল মামলার সাথে সম্পর্কিত। মামলায় অভিযুক্ত তৌফিক, মোহাম্মদ আয়ান (রাহুল নামে পরিচিত) এবং রিয়াজের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ধর্মান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ৭ জুন, ২০২২-এ এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার পর পুলিশ চার্জশিট দাখিল করেছিল। অভিযোগ ছিল যে, আয়ান একটি মিথ্যা ফেসবুক আইডি (রাহুল নামে) তৈরি করে একটি যুবতীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে যখন সত্য প্রকাশ পায়, তখন ধর্মান্তরণের চাপ সৃষ্টি করা হয়।
মামলার এক পর্যায়ে অভিযোগকারী যুবতী নিজের ইচ্ছায় ধর্মান্তরণের দাবি করেছিলেন এবং অভিযুক্তদের সাথে মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন। তবে, হাইকোর্ট এই দাবিকে খারিজ করে দিয়েছে, বলে, “ধর্মান্তরণ বিশ্বাসের জন্য নয়, বিয়ে বা অন্য কোনো স্বার্থের জন্য হলে তা সরল বিশ্বাস হিসেবে গণ্য হবে না।” ফলে, মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ হওয়ার সাথে সাথে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
সমাজের উপর প্রভাব
এই রায় সমগ্র ভারতবর্ষে ধর্মান্তরণ ও নারী সুরক্ষার বিষয়ে একটি নতুন আলোকপাত করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এই রায় নারীদের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী সংকেত দেবে। সমাজকর্মী শাখা সরকার বলেন, “এই রায় ধর্ম ও বিশ্বাসের সত্যিকার অর্থ বোঝায়। এটি প্রতারণা ও শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।”
তবে, কিছু সমালোচকের মতে, এই রায় ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে। তিনি বলেন, “ধর্মান্তরণের ইচ্ছা নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করবে। আদালতের হস্তক্ষেপ এটিকে জটিল করতে পারে।”