পুতিনের হুমকি: জার্মানি লিথুয়ানিয়ায় ৫,০০০ সৈন্য মোতায়েন, ইউরোপ আতঙ্কিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসী নীতির সম্মুখীন হয়ে জার্মানি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার, জার্মানি লিথুয়ানিয়ায় ৫,০০০ সৈন্য স্থায়ীভাবে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ইউরোপের পূর্ব অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ন্যাটোর সাথে সহযোগিতার একটি অংশ। মঙ্গলবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও সম্ভাব্য বিস্তৃত হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই পদক্ষেপ ইউরোপকে আতঙ্কিত করেছে এবং বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা বাড়িয়েছে।
কেন এই পদক্ষেপ? রাশিয়ার হুমকির ছায়া
জার্মানির সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ হলো রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি ও পুতিনের আগ্রাসী নীতি। ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পর, জার্মানি বিশ্বাস করে যে রাশিয়ান সেনাবাহিনী শুধু ইউক্রেনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি লিথুয়ানিয়া ও অন্যান্য ন্যাটো দেশে আক্রমণের হুমকি তৈরি করতে পারে। লিথুয়ানিয়া রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের সাথে সীমান্ত ভাগ করে এবং রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ সামরিক ঘাঁটি থেকেও নিকট, যা এই অঞ্চলকে বিশেষভাবে সংবেদনশীল করে তোলে।
জার্মানি তার ঐতিহাসিক “যুদ্ধ থেকে দূরে থাকা” নীতি পরিত্যাগ করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন শীর্ষ জার্মান জেনারেল বলেন, “রাশিয়া ও পুতিনের কাছ থেকে হুমকি রয়েছে। আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্তুত থাকতে হবে।” জার্মান পার্লামেন্ট ঋণের নিয়ম পরিবর্তন করে ৪২০ বিলিয়ন পাউন্ডের একটি তহবিল তৈরি করেছে, যা সামরিক বাহিনীকে আর্থিক সহায়তা দেবে।
লিথুয়ানিয়ায় স্থায়ী সেনা: ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়
লিথুয়ানিয়ায় ৫,০০০ সৈন্যের একটি সাঁজোয়া ব্রিগেড মোতায়েন করা হবে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার জার্মানি বিদেশে স্থায়ীভাবে সেনা পাঠাচ্ছে। এই পদক্ষেপ ন্যাটোর পূর্ব ফ্ল্যাঙ্কের নিরাপত্তা শক্তিশালী করবে, যা রাশিয়ার সম্ভাব্য বিস্তৃত আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি বাধা হিসেবে কাজ করবে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোল্জ বলেন, “আমরা ইউরোপের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য দায়ী। এই সিদ্ধান্ত ন্যাটো সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
তবে, এই সিদ্ধান্ত ইউরোপে ভয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন যে, এটি রাশিয়ার সাথে আরও তনাব বাড়াতে পারে, যা বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। একজন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলেন, “পুতিন এই সেনা মোতায়েনকরণকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে দেখবে, যা উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে আরও সংঘর্ষ নিয়ে আসতে পারে।”
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: পুতিনের চুপি চুপি বার্তা
রাশিয়া এখনও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি ব্যাখ্যা দেয়নি, কিন্তু ক্রেমলিনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “ন্যাটোর প্রসারণ রাশিয়ার সুরক্ষার জন্য হুমকি। আমরা যথাযথভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব।” পুতিনের পূর্ববর্তী বক্তব্যে দেখা গেছে যে তিনি লিথুয়ানিয়া ও অন্যান্য ব্যাল্টিক রাষ্ট্রকে রাশিয়ার প্রভাব এলাকা হিসেবে বিবেচনা করেন, যা এই সিদ্ধান্তকে আরও জটিল করে তোলে।
ইউরোপ ও বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গ বলেন, “জার্মানির এই পদক্ষেপ ইউরোপের নিরাপত্তা জোরদার করবে। আমরা রাশিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ।” তবে, ফ্রান্স ও ইটালির মতো দেশগুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সতর্ক, কারণ তারা ভয় পাচ্ছে যে এটি রাশিয়ার সাথে সংঘর্ষ বাড়াতে পারে।